মধুপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মন্দিরের জমিতে মার্কেট নির্মাণ করছে আ’লীগ সমর্থিত শিক্ষক সমিতি ।। - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, জুন ২১, ২০১৮

মধুপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মন্দিরের জমিতে মার্কেট নির্মাণ করছে আ’লীগ সমর্থিত শিক্ষক সমিতি ।।

জাহাঙ্গীর আলম, টাঙ্গাইল-
সনাতন ধর্মালম্বীদের দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক টাঙ্গাইলে মধুপুরের শ্রী শ্রী মদন গোপাল দেববিগ্রহ মন্দিরের মূল্যবান জমি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে দখল করে নির্মান কাজ করছে সরকার দলীয় সমর্থিত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হুমকি ধামকিতে মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ ভয়ে স্থবির হয়ে গেছে। নীরব কান্নায় মধুপুরের গোটা হিন্দু স¤প্রদায় বোবা হয়ে গেছে। তাদের চোখের সামনে আইন আদালত উপেক্ষা করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান জমি দখল করে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরই সমর্থিত সংখ্যালঘু বান্ধব সরকার নামে খ্যাত দলীয় নেতৃবৃন্দ।
ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা রাজশাহীর পুঠিয়ার জমিদার মহৎপ্রান মহারানী হেমন্তকুমারী মধুপুর শহরের প্রানকেন্দ্রে বাংলা ১২৯৮ ইংরেজি ১৮৯১সালে শ্রী শ্রী মদনগোপাল দেববিগ্রহ নামে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে ১২টি দাগের মোট ৯.১৭ একর জমি মন্দিরের নামে দিয়ে যান। সেই থেকে হিন্দু স¤প্রদায় প্রতি বছর একমাস ব্যাপি গোষ্ঠমেলাসহ সকল ধর্মীয় ক্রিয়াদি সম্পন্ন করে আসছে। দেশে একমাত্র এখানেই মাসব্যাপি মেলা হওয়ায় একটি বিশেষ ঐতিহ্য লাভ করেছে। সব শ্রেনী স¤প্রদায়ের মানুষ মেলায় সওদা করার জন্য এটি সার্বজনীন রূপ নেয়।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার উক্ত মূল্যবান জমি অধিগ্রহণ করে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। পরে মন্দিরের সেবাইতগণ আইনের আশ্রয় নিলে ময়মনসিংহ মুনসেফ আদালত ০৫/২৮/১৯৬৩ এর রায়ে সরকার পক্ষ হেরে যায়। হেরে গিয়ে উক্ত রায়ের বিপক্ষে আপিল করে। আপিল মামলা ৪৫/১৯৬৪ এর ২৯/০৭/১৯৬৭ তারিখে আদালতে রায়েও আপিল মামলায় সরকার পক্ষ হেরে যায়।
মন্দিরের পক্ষে রায় হওয়ায় হিন্দু সম্প্রদায় নির্বিঘ্‌ন তাদের বাৎসরিক সকল ধর্মীয় ক্রিয়াদিসহ অনান্য উৎসবাদি পালন করে আসছে। স্বাধীনতার পর ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে অনেক জমি জবরদখল হয়ে যায়। অবশিষ্ট জায়গায় তারা ধর্মীয় সকল ক্রিয়াদি ও উৎসব পালন করে আসছে। ৮৭ খতিয়ানের ২৪১ দাগে মূলত বড়  ধর্মীয় উৎসব পালন হয়। এই দাগের আনুমানিক প্রায় ৮শতক জায়গায় বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মধুপুর শাখার সরকার দল সমর্থিত কমিটির সাধারন সম্পাদক মফিজ উদ্দিন ও সমিতির নামে বহুতল বানিজ্যিক ভবন নির্মান কমিটির আহ্ববায়ক কবির হোসেনের নেতৃত্বে  ভবন নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করে। তারা মধুপুর পৌর সভায় প্লান পাসের আবেদন করে। কিন্তু জমির সঠিক কাগজ প্রদানে ব্যর্থ হলে পৌর কর্তৃপক্ষ প্লান প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু শিক্ষক সমিতি বেআইনীভাবে ভবন নির্মানের উদ্যোগ চালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে  মিডিয়ায় লেখালেখি ও মন্দির কমিটির সাধারন সম্পাদক এবং সেবাইত জীবন কুমার চৌধুরীর  আবেদনের প্রেক্ষিতে মধুপুর পৌরসভা গত ২২-১০-২০১৭ ইং তারিখে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি এর সার্ভেয়ার পৌরসভার ভূমি জরিপকারীকে সাথে নিয়ে সরেজমিনে মেপে সমিতির ভবন নির্মান উদ্যোগের চিহ্নিত স্থান সমিতির নয়,  সেটি মন্দিরের মর্মে ২২-১১-২০১৭ তারিখে রিপোর্ট প্রদান করেন। কিন্তু শিক্ষক সমিতি এসবের তোয়াক্কা না করে  পৌরসভার প্লান পাস ছাড়াই বানিজ্যিক ভবন নির্মানে অগ্রসর হয়।
বাধ্য হয়ে মন্দির কমিটি টাঙ্গাইল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আইনের আশ্রয় নেয়। মামলা নং ৭৯৬/৭। বিজ্ঞ আদালত ২৩-১১-১৭ তারিখে ১৪৪ ধারা জারি করেন। এরপর হতে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মন্দির কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের উপর বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি দেখিয়ে মামলা তুলে নিয়ে জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
সর্বশেষ গত ৬ জুন তারিখে মন্দিরের জমিই মন্দির কমিটিকে বুঝিয়ে দেয়ার হাস্যকর ফন্দি করে। মন্দির প্রাঙ্গনে ওসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সামনেই মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দদের বকাঝকা ও ভয়ভীতি প্রদান করে মামলা তুলে নিয়ে জায়গা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দ।
এরপর হতে শিক্ষক সমিতি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মন্দিরের জায়গায় ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেছেন।
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় অসহায়ের মত চেয়ে দেখছে ও নীরব কান্নায় বোবা হয়ে গেছে। কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন ধর্মপ্রাণ হিন্দু বলেন, আমরা সব সময় নৌকায় ভোট দেই ও আওয়ামী লীগ সরকারকে সংখ্যালঘু বান্ধব সরকার মনে করি, সেই তারাই  যখন আমাদের মন্দিরের জমি আইন আদালত না মেনে গ্রাস করছে তখন আমরা কি করব। ধর্মকর্ম করতে না পারলে জায়গা জমি ফেলে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। কারন, পাকিন্তান সরকার যা পারেনি বা করেনি আমাদের সমর্থিত সরকার তাই করছে। অতএব পালানোর কোন বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে তারা সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও সহায়তা কামনা করেছেন।

Post Top Ad

Responsive Ads Here