বংশপরম্পরায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের নিপুণ কারিগর অনিলের গল্প - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, জুন ২৮, ২০১৮

বংশপরম্পরায় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের নিপুণ কারিগর অনিলের গল্প


নজরুল ইসলাম তোফা:: শতাব্দীর পর শতাব্দীতেই কিছু মানুষ বংশপরম্পরায় দেখা যায় যে আবহমান গ্রামবাংলায় লোকজ জ্ঞানে এবং সৃজনশীল মেধায় বাদ্য যন্ত্রের সমৃদ্ধিতে তাঁদের নিজস্ব অভিজ্ঞতাকেই যেন ব্যবহার করে আসছে। তাঁরা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন স্বহস্তে নানা বাদ্য যন্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত। বলা যায় যে, কোনো ভাবে পেটে ভাতে জীবন ধারণ করেই আসছেন। আসলেই তাঁদের নেই উন্নত প্রযুক্তি কিংবা আধুনিক প্রশিক্ষণ, তাছাড়াও তাঁদের পুঁজির অভাবেই এ শিল্পের বেহাল দশা দিনে দিনেই বৃৃৃৃদ্ধি পাচ্ছে, এখন এমন এ শিল্পের অনেকাংশে যেন ভাটা পড়তে বসেছে। তবুও কেউ না কেউ আনন্দের ধারা অব্যাহত রেখেই গানের সুরে বলছেন, টাকডুম টাকডুম বাজাই, বাংলাদেশের ঢোল। সব ভুলে যাই, সব ভুলে যাই। তাও ভুলিনা বাংলাদেশের ঢোল। এই ধরণের রসিকতার মানুষের দেখা মিলে যায় সত্যিই ভাবতে অবাক লাগছে। তাঁরা যেন প্রাণের টানেই বা পেটের ক্ষুধা নিয়ে এই বাদ্যযন্ত্রের শৈল্পিক কারিগরি হয়ে আছেন। বাপদাদার ঐতিহ্য মনে করেই কেউবা কেউ এই পেশাটিকে ছাড়তে নারাজ। সুতরাং এমন পেশার সুদক্ষ কারিগর ও মিউজিক ম্যান শ্রী অনিল চন্দ্র দাস, বয়স তাঁর ৬০ বছর।
অনিল চন্দ্র দাসের একমাত্র ছেলে শ্রী মিলন কুমার দাসকে নিয়ে বাদ্যযন্ত্র নির্মাণে রয়েছেন। এক ছেলে ও একটি মেয়ে তাঁর। মেয়ে ও ছেলেকে অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়েছেন, তবে মেয়ে শশুর বাড়ি গেলেও তাঁর ছেলের বিবাহিত জীবনে দু' ছেলে মেয়ে ঘরে আসে। তাঁর পরিবারে এখন সর্বমোট ছয় জন সদস্য। মাসে প্রায় দশ হাজার টাকা আয় করে, তাঁর সংসার যেন ভালোই চলে। কিন্তু এই ব্যবসার আশঙ্কায় আবারও বলেন, আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রভাবে এখন বিলুপ্তির পথেই ঐতিহ্যবাহী বাংলার বাদ্যযন্ত্র। ভবিষ্যতে এই পেশার কেমন বেহাল দশা হয় তা ভাবনায় রয়েছে। যেমন: ঢাক, ঢোল, ঢুগি, তবলা, নাল, ঘটঘটি, খমো, মাদল, খনজনি, একতারা এবং দোতারা সহ আরো অনেক প্রকারের বাদ্যযন্ত্র যেন আগের মতোই বিক্রি হয় না। দেশীয় লোকজ অনেক বাদ্যযন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এমন নান্দনিক বাদ্যযন্ত্রগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হয়তো চিনিয়ে বা পরিচয় করিয়ে দিতেই জাদুঘরের দ্বারস্থ হতে হবে।
তাঁর ছেলে মিলন কুমার দাসকে এই বাদ্য যন্ত্র তৈরি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেছেন, বাবার সঙ্গে কাজ করতে ভালোই লাগে। তাছাড়া বাপ দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়া কখনো উচিত হবে না। কি দিয়ে তৈরি করেন এই সব বাদ্য যন্ত্র? উত্তরে বলেন, মাটির খোল, কাঠের ঢোল, তবলা কাঠের ও মাটির ঢুগি তৈরিরসহিত আজকের আধুনিক যুগের লোহার ড্রামসেট এবং প্লেন শিটের সমন্বয়েই হরেক রকমের বাদ্যযন্ত্রের শৈল্পিক ও সুদক্ষ কারিগর তাঁর বাবা। তিনি আরও বলেন, হারিয়ে যাচ্ছে এই দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা, আগের মতো দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা নেই বললেই চলে। খুুব কষ্ট করে বাপ-দাদার জাত পেশাটি তিনি ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।বংশপরম্পরায় তাঁর পূর্বপুরুষেরা বাদ্যযন্ত্র ও সঙ্গীত চর্চার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। অনিল চন্দ্র দাসের বাবার নাম দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস আর দাদুর নাম ভুলানাথ চন্দ্র দাস। সবাই এ পেশায় খুব সফল কারিগরি ছিলেন।একেরপর এক বংশ অতিক্রম করে তাঁর হাতে এসে দাঁড়িয়েছে এমন পেশা। নজরুল ইসলাম তোফাকে বলেছেন, পূর্ব পুরুষদের মৃত দেহ আগুনে সৎকারে উদ্দেশ্যে যে খোল বাজানো হয় তা বংশের ঐতিহ্য। আজও তা রয়েছে, তবে খোলে শুধু চামড়াটাই যেন পরিবর্তন করে মৃত সৎকার সম্পন্ন করেন। বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে চামড়া ব্যবহারে গরু, মহিষ, খাসির চামড়া ও হালান বরকীর চামড়া ক্রয় করে নিয়ে এমন শিল্প গুলো নির্মাণ করেন। আবার ড্রাম সেটের পেপার বা স্ক্রিন পেপার রাজশাহী থেকে ক্রয় করে এনে কাজে ব্যবহার করেন। আরও তিনি বলেছেন, শাস্ত্র-গ্রন্হেই রয়েছে অসুর, দৈত্য, দানব এবং অসুভ হীন শক্তিকে প্রতিহত করবার চেষ্টায় অনেক বাদ্য যন্ত্রের প্রচলন রয়েছে। তা হচ্ছে: ডঙ্কা, শিঙ্গা, ঝাঁঝ, (কাশ বা কাশী) ঝাঁপতাল, তুরী, ভেরী ও মাদল সহ অনেক বাদ্যযন্ত্র। তিনি এইসব বাদ্যযন্ত্র ভারত থেকে আমদানি করেন আবার কিছু কিছু বাদ্য যন্ত্র স্বহস্তেই তৈরি করে ''সুর তরঙ্গ'' দোকানে রাখেন। এমন দোকানটি রাজশাহী থেকে নওগাঁ যাওয়া মহাসড়কের বামে রাস্তা সংলগ্ন
একটি সরু রাস্তার কোনে অবস্থিত। ঠিকানা: সাবাই হাট, মান্দা, নওগাঁ।
তিনি বলেন, এমন বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষায় তিনি চেষ্টা করছেন। তবে তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এ কথাও প্রকাশ করেন নি। অনেক দূর দূরান্তের মানুষ তাঁর কাছে আসলে তিনি অনেক আনন্দ পান। তাঁর তৈরি বাদ্যযন্ত্রের প্রসার ঘটানোই যেন অনেক ইচ্ছা। এমন এ পেশা ধরে রাখার জন্যই হয়তো বা দেশীয় অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন। অর্থিক উপার্জন ও কঠোর শ্রমের মাঝে বিস্তর ব্যবধানেও এই নিপুণ শিল্প শৈলী বাঁচিয়ে রাখাটাই অনিল চন্দ্র দাস এবং ছেলে মিলন কুমার দাসের কামনা।

Post Top Ad

Responsive Ads Here