হুমকির মুখে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ ও ঘরবাড়ি ! - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

সোমবার, জুন ২৫, ২০১৮

হুমকির মুখে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ ও ঘরবাড়ি !

পৌলী নদীতে ভাঙন

জাহাঙ্গীর আলম, টাঙ্গাইল
বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইলের পৌলী নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নদীর বাম তীরে ৬০০ মিটার ও ডান তীরে ৮০০মিটার এলাকা এবং ৮-১০টি বাড়ি নদীর গর্ভে চলে গেছে। ডান তীরের ভাঙন টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে স্থানীয়রা জানায়, বেশ কিছুদিন যাবত পৌলী নদীতে বর্ষার পানি এসেছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে নদীর দুই তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পৌলী নদীর বাম তীরে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভা ও সহদেবপুর ইউনিয়ন এবং ডান তীরে সদর উপজেলার গালা ও ঘারিন্দা ইউনিয়নের আওতায়। নদীর বাম তীরে (উত্তরাংশে) অর্থাৎ এলেঙ্গা পৌরসভার অংশে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে এলেঙ্গা পৌরসভার ফটিকজানী ও মহেলা গ্রামের ৬০০ মিটার এলাকার আবাদি জমি এবং মহেলা গ্রামের সেকান্দর আলী ও তার ভাইদের ৮-১০টি বাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে। নদীর ভাঙন চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। বাঁধটি রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাঁধের পাশেই মহেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহেলা মাদ্রাসা, মহেলা ঈদগাহ মাঠ ও গোরস্থান। চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধটি ভেঙে গেলে কালিহাতী উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি-ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা প্লাবিত হয়ে অপুরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে। পৌলী নদীর ডান তীরে রেলব্রিজ সংলগ্ন এলাকাটিও এলেঙ্গা পৌরসভার মহেলা আদর্শ গ্রাম(গুচ্ছগ্রাম) এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের পাছবেথইর, আগবেথইর ও শালিনা গ্রামের অংশেও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০০মিটার এলাকা ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে বর্তমানে কম্পার্টমেন্টালাইজেশন পাইলট প্রকল্পের বাঁধ (টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ) ছুঁই ছুঁই করছে। এ বাঁধটি ভাঙনের শিকার হলে টাঙ্গাইল শহর, গালা, ঘারিন্দা, করটিয়া ইউনিয়ন সহ বাসাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর, ফসলী জমি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার ফটিকজানী মো. জয়নাল আবেদীন, বেলায়েত হোসেন, মহেলা গ্রামের মামুনুর রশিদ, আলতাফ মিয়া সহ অনেকেই জানান, শুকনো মৌসুমে নদীর তলদেশে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করায় এখন নদী তীরের নিচের অংশ ধ্বসে ভেঙে পড়ছে। নদীতে পানি আসার সময়ই পরিস্থিতি বিবেচনায় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তিনি ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলেও কোন কার্যকারিতা দেখা যায়নি। ফলে নদীর তীর ভাঙতে ভাঙতে আবাদি জমি গিলে চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধ কামান্না রাস্তার কাছাকাছি এসে পৌঁচেছে। বাঁধটি ভাঙনের শিকার হলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে অপুরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হবে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের পাছবেথইর গ্রামের জবেদা বেগম, আমীর আলী এবং পাছবেথইর গ্রামের বুজরত আলী, আব্দুল বারেক সহ অনেকেই জানান, নদীতে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অবাধে দিনরাত বালু উত্তোলন করায় এখন নদী তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনের ভাঙনে নদী তীর বর্তমানে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের খুব কাছে এসেছে। এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে টাঙ্গাইলের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের সর্বনাশ হয়ে যাবে।
ভাঙনের খবর পেয়ে মঙ্গলবার(১৯ জুন) বিকালে পৌলী নদী এলাকা পরিদর্শন করেন, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ প্রমুখ। এ সময় স্থানীয়দের দাবির মুখে কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। সে লক্ষ্যে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জেলার পৌলী নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বুধবার (২০ জুন) একটি পত্র (স্মারক নং-০৫.৩০.৯৩০০.০০৭.৩০.০০১.১৭-৪২২, তাং-২০/০৬/২০১৮ইং) পাঠিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে এলঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর শুকুমার ঘোষ ও আব্দুল বারেক জানান, পৌলী নদীতে প্রতিবছর বর্ষায়ই দুই তীরে ভাঙন দেখা দেয়। এ বিষয়ে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানালেও তারা কোন ব্যবস্থাই নেননি। এ বছর বর্ষার শুর
শুরুতেই নদীর বাম তীরে ফটিকজানী গ্রামের অংশে প্রস্থে ন্যূনতম ৭০ ফুট ও মহেলা গ্রামের অংশে ন্যূনতম ১৪০ ফুট প্রস্থে বিশাল এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ জানান, তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। প্রকল্প অনুমোদিত হলে ভাঙনরোধে কাজ করা হবে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে তাদের কাছে কোন বাজেট নেই। বাজেট না পেলে শুধু শুষ্ক কেন কোন মৌসুমেই কাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, তিনি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েছেন। পৌলী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে দুই স্তরে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও শুকনো মৌসুমে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। নদী ভাঙনে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেলে টাঙ্গাইল শহর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা মারাত্মক দুর্যোগের সম্মুখিন হবে। তিনি জানান, পানি সম্পদ মন্ত্রী মহোদয়ের পিএস- এর সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। দ্রæত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Post Top Ad

Responsive Ads Here