জাহাঙ্গীর আলম, টাঙ্গাইল
রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘনায় শিক্ষার্থী মৃত্যুর প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়ক চাইসহ নয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহা সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলো টাঙ্গাইলের সাধারন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করে। পরে সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ নিরাপদ সড়ক চাইসহ বিভিন্ন শ্লোগানে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ১১ টা ৪০ মিনিট হতে ১২ টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাস মোড়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী বিভিন্ন গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ড্রাইভারের লাইসেন্স দেখার চেষ্টা করলে পুলিশ নিষেধ করেন। আন্দোলনে মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ, বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কুমুদিনী কলেজ, টাঙ্গাইল স্কুল এন্ড কলেজ, হাজী আবুল হোসেন ইন্সটিউট এন্ড টেকনোলজি (হ্যাভিট), বিবেকানন্দ হাইস্কুল এন্ড কলেজ, পুলিশ লাইনস্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
সড়ক অবরোধের সময় সরকারি কুমুদিনী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশামনি বলেন, রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন তাদের হত্যাকারীদের বিচার চাই।
অপর শিক্ষার্থী মাহফুজা হক মিম বলেন, আমাদের দেশে আইন রয়েছে কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ না থাকায় অদক্ষ চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায় ও দুর্ঘটনা ঘটে। আমি দেশে প্রতিটি গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন ও ফিটনেস এবং ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।
সৃষ্টি কলেজের শিক্ষার্থী চন্দন দাশ বলেন, বিআরটিএ’র আইনের তোয়াক্কা না করেই রাস্তায় চালকরা গাড়ি চালিয়ে থাকে। আমি বিআরটিএ’র আইন প্রয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থী আবু নাইম বলেন, আমাদের দেশে যেকোন কাজই আন্দোলনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই আমরা নিরাপদ সড়কসহ নয় দফা দাবিতে আন্দোলন করছি।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মিমরুল হোসেন তুর্য্য বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। পুলিশ সহযোগিতা করার কারণে তাদের ধন্যবাদ জানাই। ঢাকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আহাদুজ্জামান মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করেছিলো। পুলিশ তাদের সহযোগিতা করেছে। আবার আন্দোলন শেষে তারা যার যার প্রতিষ্ঠানে চলে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। তারপর থেকে নিরাপদ সড়কসহ নয় দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
নয় দফা দাবিগুলো হলো- ১. দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে। ২. নৌ-পরিবহন মন্ত্রীকে নিঃশ্বর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে। ৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে। ৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে- থামিয়ে তাদেরকে নিতে হবে। ৭. শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না এবং বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।