রোহিঙ্গাদের মানবতা দেখাতে গিয়ে বিপদে বাংলাদেশ : ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯

রোহিঙ্গাদের মানবতা দেখাতে গিয়ে বিপদে বাংলাদেশ : ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন



কুতুব উদ্দিন রাজু,চট্টগ্রাম:
 মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা করা হয় এবং ষড়যন্ত্র করে অমানবিকভাবে নারী ও শিশু নিপীড়ন নির্যাতন করে চলেছিল মিয়ানমার সরকার। এটা ছিল মিয়ানমারের অভ্যন্তরের এক পরিকল্পিত গণহত্যা। রোহিঙ্গাদের সে সময়ে মিয়ানমার নির্বিচারে হত্যা, নারী-শিশুর প্রতি বিবেকহীন নির্যাতন এবং প্রাণে বাঁচানোর বৃহত্তর স্বার্থে যখন বাংলাদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিল, তখন তাদের মানবতার স্বার্থে সাময়িকভাবে আশ্রয় প্রদান করা হয়। মানবিক কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের কান্না আর রোহিঙ্গাদের মরণ এবং রোহিঙ্গাদের যে পরিস্থিতি দেখেছিলাম এটি দেখার পর ১৯৭০ আর ১৯৭১ সালের যে গনজাগরণ হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদারের হাত থেকে দেশ স্বাধীন করার জন্য গোটা বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ দেশ বাঁচানোর জন্য সে সময়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো ঠিক আরেক গণজাগরণ হয়েছিল ২০১৭ সালের রোহিঙ্গাদের বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ উঠেপড়ে লেগেছিলাম। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী অথবা শ্রমিক-কর্মচারী সকলেই ওই সময়ে তাদেরকে সহযোগিতা করেছিলেন। সাধারণ ব্যক্তি, সর্বস্তরের মানুষ তাদের টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড়, সব কিছু দিয়ে বুকে আঁকড়ে রেখেছিলাম। যাতে করে তাদের একটু সাহায্য করতে পারি। আর আমাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ মৌমাছির মত এসে উখিয়া-টেকনাফ ভরপুর হয়ে গিয়েছে। সারা বাংলাদেশ থেকে ট্রাকে ট্রাকে ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, কম্বল তাদের জন্য সবাই দিয়েছিলেন। তাদের দেখে কান্নাকাটি করেছিলাম। তাদের আহাজারীতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। আমাদের নিজেদেরই হাজারো সমস্যা থাকার পরেও বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে কোন অন্যায় করেনি বরং শ্রেষ্ঠ মানবিকতা দেখিয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য। মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নতুন করে ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। নতুন-পুরনো মিলে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে নতুন পুরাতন মিলে তাদের সাথে যোগ হয়েছে গত দুই বছরে জন্ম নেওয়া ৯১ হাজার শিশু। বিপুল পরিমাণে রোহিঙ্গা এই দেশে প্রবেশের পর সময়ে অনেক বিশেষজ্ঞরা অনেক ভয়ংকর তথ্য দিয়েছিলেন এ দেশে আসা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে। কিন্তু এইসব বিষয়ে কোন কর্ণপাত না করে তাদের এই দেশের মাটিতে আশ্রয় দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল পুরো দেশের মানুষ। ফলাফল হয় উল্টো। বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার তারা ধীরে ধীরে নানান অঘটনে জড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বিরদ্ধে মানবপাচার, ৩৯টি হত্যা, নারী ব্যবসা, ধর্ষণ, ইয়াবা পাচার, সড়কে গাছ কাটা, বন ভুমি ধ্বংস, স্থানীয়দের জমি দখল, অগ্নিসংযোগ, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা বিপদে পড়ে গিয়েছি। কেননা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৫ আগস্ট ২০১৯ সমাবেশের আয়োজন করেন রোহিঙ্গারা। সকাল ৯টার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামক সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ ও জেনারেল সেক্রেটারি সৈয়দ উল্লাহ। অন্য রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দের মধ্যে নূর হাকিম, মো. কামাল, আব্দুর রহিম, নূর আলম ও নারীনেত্রী হামিদা প্রমুখ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এই সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই রোহিঙ্গারা দলে দলে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। অন্তত পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে মঞ্চে থাকা রোহিঙ্গা নেতাদের সবাই তাদের নিজস্ব রীতির সাদাপোশাক পরিহিত ছিলেন। সমাবেশে আগত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে নেতারা বলেন, ‘আমাদের সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের যদি মিয়ানমারে ফিরে যেতেই হয়, তাহলে আমরা একসাথে যাব, একসাথে সীমান্ত পার হব।’ এই দৃশ্য দেখে এদেশের সকলের টনক নড়ে। খোদ এরকম একটা সমাবেশের খবর সরকার পর্যন্ত জানে না। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য আমরা খাল কেটে কুমির ডেকে এনেছি। বিরাট জাগরণ তারা করেছে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে। ব্যানার ফেস্টুন, লিপলেট তৈরি করেছে বড় বড় প্রেস থেকে এতে সন্দেহ নাই। এত কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে পেল এবং কিভাবে আমাদের প্রেস থেকে এই কাজ গুলো সম্পাদন করলেন। এর ভিতরে কারা ইন্ধন দিচ্ছে এবং তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। এই জন্যই কি আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি? এই রোহিঙ্গারা এখন বড় ধরনের বিস্ফোরণ হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা যার নেতৃত্বে সভা করেছে তার নাম মুহিবুল্লাহ। এইতো কয়দিন আগে প্রিয়া সাহার সাথে সেও আমেরিকা গিয়ে ট্রাম্পের সাথে দেখা করে এসেছে। আমি ভাবি সে আমেরিকা গেল কীভাবে? পাসপোর্ট পেল কোথা থেকে বা কার মাধ্যমে? আর তাকে ঐখান পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করল কারা? এইগুলো বের করাই এখন খুব জরুরি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এতগুলা ডিজিটাল ব্যানার আসলো কিভাবে? কারা ছাপিয়ে দেয়? হাতে হাতে মোবাইল আসল কীভাবে? ওই মোবাইলগুলো সিম পেল কোথায়? এই বিষয়গুলো জানা এখন খুব জরুরী। কেননা তারা কার ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তা তলিয়ে দেখতে হবে। এই ছাড়াও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আসায় ভূমি, স্থানীয় সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিনষ্ট ও দু®প্রাপ্য হচ্ছে। বনভূমি ও কৃষি ভূমি যেমন ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে, তাতে স্বাভাবিক পরিবেশ ও প্রকৃতি পাহাড় বিনষ্ট হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশও আজ ওই স্থানগুলোতে ধ্বংসের পথে। এদিকে সামাজিক, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গারা সবাই যে ক্যাম্পে থাকছে তা নয়, কেউ কেউ অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছে। স্থানীয় লোকদের তুলনায় রোহিঙ্গাদের শ্রমশক্তি সস্তা হওয়ায় নিষেধ থাকা সত্ত্বে¡ও কেউ কেউ তাদেরকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে। আবার রোহিঙ্গা নারীরা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে চেষ্টা করছে। এমনকি দালালচক্র বিদেশে অবৈধভাবে গলাকাটা পাসপোর্ট ব্যবহার করে অথবা নৌপথে পাচারে সচেষ্ট রয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। অন্যদিকে এদেশে ইয়াবার বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে দেশের তরুণ সম্প্রদায়কে নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। আবার বিদেশে পাচার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশীদের নামে অপপ্রচার এবং বিভিন্ন অসামাজিক কাজ করে তার দায়ও বাংলাদেশীদের ঘাড়ে পড়ছে। এ ধরনের ঘৃণ্য তৎপরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাদের কেবল আশ্রয় দেয়নি বরং ভরণপোষণ, থাকার জায়গা দিয়েছে, জাতিসংঘ ও দাতাগোষ্ঠী এদের নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ও দেশি এনজিও এদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সাহায্য করলেও এণে এদের তাদের দেশে ফেরত যেতে বাধা দিতে নানান কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে। ইংরেজিতে লেখা বিশাল ব্যানার টাঙাচ্ছে এবং শরণার্থী শিবিরকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে এক ধরনের দু’মুখী নীতি গ্রহণ করেছে,যাতে এরা এখানে থাকে আর তারা যে সাহায্য রোহিঙ্গাদের নামে সংগ্রহ করছে তার একটা বড় অংশ যেন ফান্ডে জমা হয়। বর্তমানে কক্সবাজারের টেকনাফে প্রায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। সকলের যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে, ভোটার তালিকায় যেন কোনোভাবে রোহিঙ্গারা ঢুকে না পড়ে এবং এদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড জোগাড় করতে না পারে, যেন মিশে না যায় স্থানীয় লোকদের কাতারে। একথা বলার আর প্রয়োজন পড়ে না যে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বহুমাত্রিক ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাসহ বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। এসব সমস্যার মোকাবেলা করা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রোহিঙ্গাদের পাহাড় থেকে সরিয়ে আনা প্রধান কাজ। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। না হয় তাদের প্রতি মানবতা ও মানবিকতা দেখাতে গিয়ে যে আমরা কত বড় বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি তা আরও প্রকট হবে।



Post Top Ad

Responsive Ads Here