মেহের আমজাদ, মেহেরপুর-
মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নতুন দরবেশপুর গ্রামের শৈলমারী বিলপাড়ে হাসান ও রোকন নামের আপন দুই চাচাতো ভাইকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার(১১-০৯-১৯) দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিলের উত্তর-পূর্ব কোনায় এ নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটে। শৈলমারী বিল ইজারা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে পূর্ববিরোধের জের ধরেই তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে নিহতের পরিবার।
নিহত হাসান বিশ্বাস (৪৫) নতুন দরবেশপুর গ্রামের আজাদ বিশ্বাসের ছেলে ও স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক এবং রোকন বিশ্বাস একই গ্রামের ইদ্রিস মাস্টারের ছেলে ও পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় যাবৎ শৈলমারী বিলটি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন দুই চাচাতো ভাই হাসান ও রোকন। প্রতিদিন রাতে স্থানীয় স্কুলপাড়ার ক্লাবে কিছু সময় কাটিয়ে রাত গভীর হলে বিলের পাহারাদারদের সঙ্গে দেখা করতে যান এবং বিলের সর্বশেষ খোঁজখবর নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা।
প্রতিদিনের ন্যায় বুধবার দিবাগত রাতে তারা বিলে যাবার পথে অপহরণের শিকার হন। ১০-১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তের দল হাসান ও রোকনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে শৈলমারী বিলপাড় থেকে অপহৃত এই দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে বিলের মধ্যে পাহারায় থাকা এক পাহারাদার ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। নৌকা নিয়ে বিলের মাঝখানে পাহারায় থাকা অপর পাহারাদার ইন্তাদুল জানান, বিলের ধারে গোলযোগ দেখে ভয় পেয়ে তিনিও পালিয়ে গিয়ে গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যদের খবর দেন। তার বর্ণনা মতে, ১০-১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল হাসান ও রোকনকে ধরে নিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই দৌড়ে পালিয়ে গ্রামে গিয়ে হাসান ও রোকনের পারিবারসহ গ্রামবাসীকে বিষয়টি জানালে সবাই ঘটনা স্থলে ছুটে আসে। এরপর অপহৃত দুজনকে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে বিলের উত্তর-পূর্ব কোনায় তাদের গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায় গ্রামবাসী। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার এস.এম মুরাদ আলী। এ সময় তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে টহল পুলিশের সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে সত্যতা নিশ্চিত হই। এখানে (শৈলমারী বিল) একসঙ্গে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এখনই নির্দিষ্ট করে হত্যার কারণ বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শুরু করে দিয়েছি, শিগগিরই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।’ এ ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান,সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ দারা খান, ডিবির ওসি রবিউল ইসলামসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাতেই নিহত দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায় সদর থানা-পুলিশ। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে নিহত হাসান বিশ্বাসের স্ত্রী ফরিদা খাতুন বলেন, ‘১০ বছর যাবৎ এই বিলের ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছে আমার স্বামী। এই নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। তারাই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। প্রতিদিনের ন্যায় আজও (বুধবার) বিলের দিকে যাচ্ছিল আমার স্বামী ও তার ভাই রোকন। বিলে যাওয়ার পথে ১০-১২ জন লোক তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়।’ তবে কার সঙ্গে তার শত্রুতা থাকতে পারে, বিষয়টি খোলসা করে না বললেও স্থানীয় একটি সংগঠনের লোকজনের সঙ্গে হাসানের বিরোধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
রোকনের বড় ভাই খসরু মাস্টার বলেন, ‘রোকন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিল ইজারা নেয়ার পর থেকেই আমার ভাইয়ের সঙ্গে একটি পক্ষের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিল-সংক্রন্ত বিরোধের জের ধরেই হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে।’ এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ দারা খান বলেন, ‘হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকেই অপরাধীদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। রাত থেকেই অভিযান চলছে। শিগগিরই এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।