সময় সংবাদ ডেস্ক-
এখন আর ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা সিঙ্গাপুরে নয়, ঢাকার বেশকিছু স্পটে চলছে অবৈধ এই ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) ব্যবসা। এর ফলে ইতোমধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কিছু স্পটে অভিযানও চালিয়েছে। আর এই অভিযানে আটকও হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের একজন উচ্চ পর্যায়ের নেতা।
এই অভিযান চলার পর থেকেই ধনীদের টাকা উড়ানোর জায়গা এই ‘ক্যাসিনো’ নিয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গেছে, বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত নারীদের এসব ক্যাসিনোতে আনা হতো। এমনকি প্রশিক্ষিত জুয়াড়ির পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রহরীও আনা হতো বিদেশ থেকে। ক্যাসিনোগুলোতে প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকা উড়তো। এর পরিমাণ কমবেশি ১২০ কোটি টাকাও হতে পারে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে চীন ও নেপালের অন্তত ৪০০ প্রশিক্ষিত তরুণ-তরুণী ঢাকার বিভিন্ন ক্যাসিনোয় কাজ করতেন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় তারা পারদর্শী। এমনকি তাদের চেহারাতেও রয়েছে আভিজাত্যের ছাপ।
কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তারা কাজ করতেন। কেউ রিসেপশনে, কেউ ইলেকট্রোনিক জুয়ার বোর্ড অপারেটিংয়ে এবং কেউ নিয়োজিত ছিলেন ক্যাসিনো থেকে অর্থ পাচার কাজে।
ক্যাসিনোয় আসা জুয়াড়িদের মনোরঞ্জনের জন্য আনা সুন্দরী গার্লদের রাখা হতো রাজধানীর গুলশান, নিকেতন, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা, পল্টন, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর এর বিভিন্ন এলাকার প্রাসাদোপম ভবনে।
তাদের আনা-নেয়া করা হতো প্রতিষ্ঠানের কালো কাচঘেরা নিজস্ব গাড়িতে। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে এসব গার্লদের থাকা-খাওয়া, সাজসজ্জা সব কিছুই বহন করত সংশ্লিষ্ট ক্যাসিনো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
কিন্তু রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একের পর এক অভিযানে ভিনদেশি এসব ক্যাসিনো গার্লরা পড়েছেন বিপাকে।
প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে অধিকাংশই এখন যেতে পারছেন নিজ দেশে। আবার অনেকের ভিসার মেয়াদ না থাকায় থাকতেও পারছেন না বাংলাদেশে। এদিকে যাদের ভরসায় এসেছিলেন, তারাও প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালিয়েছেন। ফলে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে তাদের মধ্যে।
ঢাকার ক্যাসিনোয় শুধু ভিনদেশি তরণ-তরুণীই নয়, পেটের দায়ে অথবা বিলাসী জীবন-যাপনের জন্য এই চক্রে জড়িয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাও। জুয়ার বোর্ড অপারেটিং ও অর্থ পাচারে ভিনদেশিদের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারাও এখন অভিজ্ঞ।
গত বুধবার বিকালে ফকিরেরপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোয় অভিযানকালে কর্মরত কয়েকজন চীনা ও নেপালি নাগরিককে আটক করে র্যাব। তাদের কারোরই ওয়ার্ক পারমিট নেই। আটকদের মধ্যে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা দুই তরুণীও ছিলেন। কাপড় পাল্টে থ্রিপিস পরতে চাইলে র্যাবের বাগড়ায় তারা বলেন, ‘পেটের তাগিদে জুয়ার বোর্ডে চাকরি করি, স্যার। আমাদের থ্রিপিসটা পরতে দেন। ওয়েস্টার্ন ড্রেস না পরলে চাকরি থাকবে না।’
নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে নেপালের এক গার্ল জানান, ইয়ংমেন্স ক্লাবে দেড় মাস ধরে চাকরি করছিলেন। দৈনিক দুই শিফটে ১২ ঘণ্টা অন্তর মোট ১২ জন গার্ল কাজ করেন। ক্যাসিনোয় তাদের ‘ডিলার’ নামে সম্বোধন করা হয়। মাসিক ও দিন হিসেবে কখনো রিসেপশনে, কখনো বোর্ডে কার্ড সরবরাহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। রিসেপশনিস্টের বেতন ২১ হাজার আর কার্ড বিতরণকারীকে বেতন দেওয়া হতো ১০ হাজার টাকা।
তাদের স্বামী এ কাজের বিষয়ে জানলেও স্বজনরা জানত না। তিনি আরও জানান, ক্যাসিনোয় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জুয়া খেলা হয়। জুয়ার বোর্ডগুলো চালু করে চীনা নাগরিকরা। বোর্ড পরিচালনা করে নেপালিরা। দিনের প্রতি শিফটে ৭০-৮০ জন মানুষ খেললেও রাতের বেলায় বেশি মানুষের সমাগম হয়। ক্যাসিনোয় অনেকে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক সেবন করে বলেও জানান তিনি।