সময়/ঢাকা:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে মুজিববর্ষের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন-যাপন করতে পারেন। দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোনো উৎসব আর কিছুই হতে পারে না।
শনিবার সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি।
গণভবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এবং সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলা প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবেই মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের গৃহহীনদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেয়া হবে, যাতে দেশের একটি লোকও গৃহহীন না থাকেন ও উন্নত জীবন-যাপন করতে পারেন। যাদের থাকার ঘর নেই, ঠিকানা নেই, আমরা তাদের যেভাবেই হোক একটা ঠিকানা নিশ্চিত করে দেব।
শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষের অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল। সেগুলো আমরা করোনার কারণে করতে পারিনি। তবে করোনা এক দিকে আশীর্বাদ হিসেবেও কাজ করেছে, কারণ আমরা গৃহহীনদেরকে ঘর করে দেয়ার দিকে বেশি নজর দিতে পেরেছি। ফলে আজ এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এরপরেও সীমিত আকারে আমরা করে দিচ্ছি এবং একটা ঠিকানা আমি সমস্ত মানুষের জন্য করে দেব। কারণ আমি বিশ্বাস করি যখন এই মানুষগুলো ঘরে থাকবে তখন আমার বাবা এবং মা- যারা সারাটা জীবন এ দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গিয়েছেন, তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহিদ রক্ত দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের আত্মাটা অন্তত শান্তি পাবে। কারণ এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই ছিল আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আজ আমি সবচেয়ে খুশি যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো পরিবারকে আমরা বসবাসের ঠিকানা দিতে পেরেছি। এই শীতের মধ্যে সেখানে তারা থাকতে পারবে। এমনকি আমাদের নিজদেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্যও আমরা ভাসানচরে বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদেরও কক্সবাজার এবং পিরোজপুরে আমরা ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদেরও ঘর করে দিয়েছি। তাদেরকে আরো ১শ’টি ভবন তৈরি করে দেয়া হবে। আজ এক লাখ ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিলাম। শিগগিরই আরো এক লাখ ঘর করে দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী এই স্বল্প সময়ে সফলভাবে গৃহনির্মাণ এবং কাগজপত্র তৈরির মতো জটিল কাজ ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে সম্পন্ন করতে পারায় ডিসি, তার কার্যালয়সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত দ্রুততম সময়ে পৃথিবীর কোনো দেশে, কোনো সময়ে, কোনো সরকার একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিয়েছে কি-না, আমার জানা নেই। যারা প্রশাসনে রয়েছেন, তারা সরাসরি ঘরগুলো তৈরি নিশ্চিত করেছেন বিধায় এটা সম্ভব ও মান সম্মত হয়েছে। সেজন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমাদের সরকারি কর্মচারীরা যেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন, তা অতুলনীয়। আর একইসাথে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়র থেকে শুরু করে সবাই এবিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। এই একটি কাজে আমরা দেখেছি সবার সম্মিলিত প্রয়াস। তাই আজ আমরা এত বড় একটা দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এই গৃহায়ন প্রকল্পে কোনো শ্রেণিকে বাদ দেয়া হয়নি; বেদে শ্রেণিকেও ঘর করে দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি এবং তাদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছি, দলিত বা হরিজন শ্রেণির জন্য উচ্চমানের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। এরই মধ্যে চা শ্রমিকদের জন্য বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছি। এভাবেই সমাজের প্রত্যেকটা শ্রেণির মানুষদের পুনর্বাসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয় এবং ৩ হাজার ৭শ’ ১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে উপকারভোগীদের মাঝে বাড়ির চাবি এবং দলিল হস্তান্তর করেন সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলার ইউএনও।
ভিডিও কনফারেন্সটি পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রাম, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুর গ্রাম, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।