পাবজি এবং ফ্রী ফায়ার গেমস বন্ধে পরিবারের কি ভূমিকা হওয়া উচিত - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, জুন ২৫, ২০২১

পাবজি এবং ফ্রী ফায়ার গেমস বন্ধে পরিবারের কি ভূমিকা হওয়া উচিত

 







মতামত:


করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ রয়েছে অর্থাৎ প্রায় পনেরো মাস। এখন আর স্কুলে যাওয়া আসার প্রয়োজন হয় না কোনো শিক্ষার্থীরই। ৭ম শ্রেণীর এক মেধাবী শিক্ষার্থী (গোপনীয়তার স্বার্থে তার নাম অনুল্লেখিত ) সে প্রথমে এক ঘন্টা করে পাবজি খেলায় সময় দিতে থাকে। মাসখানিক যেতে না যেতেই পাবজি গেমস খেলার সময় ব্যয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় । সে এখন খাওয়া-দাওয়ার বাইরে বাকি সময়টাতে পাবজিতে নিজেকে নিয়োজিত রাখছে।বাড়িতে তার মা তাকে ঠিকমতো পড়াশোনা, গোসল এবং খেলাধুলা করতে বললেও এতে সে কোনো পরোয়া করে না। তার জন্যে সময়ের কাজ অসময়ে নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে সে পরিবারের অবাধ্য হয়ে যায়। পাবজি গেমস খেলতে গিয়ে সে একটি কিশোর গ্যাং এর সঙ্গে জড়িত হয়ে যায় । প্রায় সেসকল কিশোররা একসাথে বাইরে ঘুরতে বেড়িয়ে যায়। যেখানে গিয়ে তারা টিকটক,লাইকিসহ বিভিন্ন মাদকের ব্যবহার নিয়মিত করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে পরিবার তার একমাত্র সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তাকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠাতে বাধ্য হয় । ছেলেটি এখন সংশোধনাগার থেকে বেড় হলেও সে আগের মতোই থেকে যায়।



[দুই] বাংলাদেশে এই গেমসগুলোতে আসক্তির পরিমাণ কি পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং এর নেতিবাচক দিক কোন মাত্রায় পৌঁছিয়েছে তা খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে।
গত কয়েক মাসে এই পাবজি এবং ফ্রী ফায়ার গেমস খেলতে না পারায় কিংবা গেমস খেলতে মেগাবাইট কিনতে না পারায় কিংবা গেমস খেলতে ভালো মোবাইল না থাকায় কত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে তার বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। পত্রিকায় যে শিরোনাম প্রতিনিয়ত আমাদের স্তব্ধ করে যেমনঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ফ্রি ফায়ার পাবজি গেম কেড়ে নিলো আরেক স্কুলছাত্রের প্রাণ,বাংলা ট্রিবিউন (২জুন)।



সোমবার (৩১ মে) বিকালে পাবনায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন আসিফ (১৮) নামের এক যুবক। ফ্রি ফায়ার পাবজি গেম খেলার জন্য বাবার কাছে স্মার্টফোন চেয়ে না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন,বাংলা ট্রিবিউন(৩১শে মে)।

ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে না পেরে ২ আত্মহত্যা(২৬/০৫/২০২১), দৈনিক যায়যায়দিন।

ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে না পারায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা(২৫/০৫/২০২১),জাগো নিউজ ২৪. কম।

গেম খেলার জন্য ফোন কিনে’ না দেওয়ায় স্কুলছাত্রের আত্মহত্যা(১৭/০৫/২০২১),দৈনিক যুগান্তর।

ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলার টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা(২২/০৫/২০২১),বাংলাদেশ জার্নাল।

ফ্রি-ফায়ার ও পাবজি খেলতে না দেওয়ায় কিশোরের আত্মহত্যা,দৈনিক দেশরূপান্তর(০৪/০৬/২০২১)।

ফ্রি ফায়ার’ খেলতে এমবি কেনার টাকা না পেয়ে কিশোরের আত্মহত্যা(২১/০৫/২০২১),দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।

পাবজি খেলতে না পেরে ইন্টারনেটের তার কাটতে গিয়ে ছাত্রের মৃত্যু(০৮/০৬/২০২১),দৈনিক যুগান্তর।




[তিন] এই গেমসগুলোর নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সচেতন মহলরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর উদ্যোগে(শিরোনামঃ টিকটক-লাইকি পাবজি বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ,দৈনিক যুগান্তর, ২০শে জুন) সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরে এই গেমস নিষিদ্ধকরণে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে এই গেমস নিষিদ্ধকরণে শিক্ষামন্ত্রণালয়, সরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসির কাছে দাবি জানায়।



[চার] চলতি জুন মাসের শুরুর দিকে ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মতো জনপ্রিয় দুই গেম বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সুপারিশ করেছে শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুই মন্ত্রণালয় থেকে এমন সুপারিশ পেয়ে এ নিয়ে আলোচনা করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
আলোচনায় ওই দুই গেমের আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়।  

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম দুটি বন্ধে দুই মন্ত্রণালয় থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি সত্য যে ওই দুটি গেম কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করেছে।
(সূত্রঃ যুগান্তর, ২৯ মে ২০২১)



[পাঁচ] এছাড়াও ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই গেমসগুলো নিষিদ্ধকরণের দাবিতে মানববন্ধন এবং সভা সমাবেশ করতে দেখা যায়। পুরো বাংলাদেশে সচেতন নাগরিকেরা এই গেমস নিষিদ্ধকরণের দাবিতে বিভিন্ন লেখালেখি, ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জনগনকে বারংবার ওয়াকিবহাল করতেছে।




[ছয়] উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, গেরিনা ফ্রি ফায়ার (ফ্রি ফায়ার ব্যাটলগ্রাউন্ডস বা ফ্রি ফায়ার নামেও পরিচিত) একটি ব্যাটল রয়্যাল গেম যা ১১১ ডটস স্টুডিও দ্বারা বিকাশিত এবং অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসের জন্য গেরিনা দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৯ সালে এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ডাউনলোড করা মোবাইল গেম হয়ে উঠেছে।জনপ্রিয়তার কারণে, গেমটি ২০১৯ সালে গুগল প্লে স্টোর দ্বারা “সেরা জনপ্রিয় ভোট গেম” এর জন্য পুরস্কার পেয়েছিল। ২০২০ সালের মে পর্যন্ত, ফ্রি ফায়ার বিশ্বব্যাপী দৈনিক ৮০ মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারীদের সাথে একটি রেকর্ড তৈরি করেছে। নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত, ফ্রি ফায়ার বিশ্বজুড়ে বিশ্বব্যাপী ১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত, ফ্রি ফায়ার গুগল প্লে স্টোরে ৫০০ মিলিয়ন ডাউনলোড রয়েছে।


বাংলাদেশ থেকে পাবজি গেমের ইন অ্যাপ পারচেজে মাসে অন্তত ৭০ থেকে ৯০ কোটি টাকার মতো চলে যাচ্ছে। পাবজিতে যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন আসে তা থেকে গেম নির্মাতাদের (বাংলাদেশ থেকে) আয় হয় ১৫-২০ কোটি টাকা।

অনেক কিশোর ও তরুণ অভিভাবকের বিকাশ, নগদ, রকেট, ইউপে ও বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পিন নাম্বার নিয়ে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি খেলার জন্য খরচ করছে। অনলাইনে একেকটি পেজ খেলোয়াড়দের জন্য একেক রকম প্যাকেজ অফার দিয়ে থাকে।


পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সার্ভার থেকে গেম দুটির মুদ্রা কিনতে হয়। এজন্য আমাদের ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ডের ব্যবহার করতে হয়। ডলার পেমেন্টের মাধ্যমে আমাদের ওই মুদ্রা কিনতে হয়। হাজারে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ থাকে। বাকি টাকা পাঠিয়ে দিতে হয় বিদেশে। বর্তমানে বাংলাদেশে যারা ফ্রি ফায়ার ও পাবজি খেলছেন তারা বেশিরভাগ মালয়েশিয়ার সার্ভার থেকে নেয়া মুদ্রা ব্যবহার করছেন। কারণ অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়ার সার্ভারের দাম অনেক কম। একেকটি পেজ থেকে দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার অনলাইন গেম মুদ্রা বিক্রি হয়। দেশে বর্তমানে এরকম কয়েক হাজার পেজ রয়েছে।যদিও চাউর হচ্ছে গত ৮ ই জুন থেকে বাংলাদেশে নিজস্ব সার্ভার এসেছে।


এই গেমসের নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষার্থী- কিশোর-কিশোরীদের সহিংস করে তুলছে। তারা নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে,তারা মূল্যবান সময় অযথা নষ্ট করে দিচ্ছে, পিতা মাতার অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে,অসামাজিকীকরণ হয়ে পড়ছে।তাদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে,হতাশাগ্রস্থ করে তুলছে, কিশোর গ্যাং তৈরী করছে এবং এদের সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে আত্মহত্যা।

সবকিছু সত্ত্বেও সচেতন সাধারণ নাগরিকরা যেমন এই গেম বন্ধে দাবি তুলছে সেই সাথে তাঁরাও এটাও বিশ্বাস রাখছে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিলে হয়তো বাচ্চারা ফিরে আসবে। এবং ছেলে মেয়েরা করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়টা যেন গেমসের প্রতি আসক্ত না হয় সেই দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী পরিবারের। সেই সাথে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা আমাদের কথা চিন্তা করে নিশ্চয় একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আমরা আশা রাখি।


লেখক: নাজমুল, শিক্ষার্থী,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

Post Top Ad

Responsive Ads Here