সময় সংবাদ ডেস্কঃ
দেশীয় ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ই-কমার্স) ইভ্যালির চলতি সম্পদ বা মূলধনের পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা হলেও প্রতিষ্ঠানটির ঋণ রয়েছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এতে মূলধনের চেয়ে ছয় গুণ ঋণে ডুবে আছে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি এসব তথ্য উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা নেই বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত পণ্যমূল্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নিয়েছে ইভ্যালি। কিন্তু এ পরিমাণ টাকার পণ্য সরবরাহ করেনি।
অন্যদিকে পণ্য কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিগুলো ইভ্যালির কাছে পায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ইভ্যালির চলতি সম্পদ দিয়ে গ্রাহক ও পাওনাদারদের বকেয়া অর্থের মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব। বাকি প্রায় ৮৪ শতাংশ বা ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সমপরিমাণ দায় অপরিশোধিত থাকবে। ইভ্যালির চলতি সম্পদের স্থিতি দিয়ে শুধু গ্রাহক দায়ের এক-তৃতীয়াংশেরও কম পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির মোট আয় (রেভিনিউ) ২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ব্যয় হয়েছে ২০৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি এক টাকা আয়ের জন্য তিন টাকা ৫৭ পয়সা বিক্রয় ব্যয় করেছে, যা স্টেটমেন্টে উল্লেখ রয়েছে এবং এ অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি ইভ্যালির পক্ষ থেকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সম্প্রতি ইভ্যালি.কম.বিডি-এর ওপর পরিচালিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৭ জুন প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ইভ্যালির চলতি দায় ও লোকসান দুটিই ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোম্পানিটি চলতি দায় ও লোকসানের দুষ্ট চক্রে বাঁধা পড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ক্রমাগতভাবে সৃষ্ট দায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে না থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই লোকসান করে আসছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লোকসানের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইভ্যালি আগের দায় পরিশোধ এবং লোকসান আড়াল করতে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফারের (যেমন-সাইক্লোন, আর্থকোয়েক ইত্যাদি নামে মূলত ব্যাপক হ্রাসকৃত মূল্যে বা লোকসানে পণ্য সরবরাহ) মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে।
প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ও দায়ের ব্যবধান অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ক্রমাগত নতুন দায় সৃষ্টির (গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে দায় বৃদ্ধি) মাধ্যমে পুরাতন দায় পরিশোধের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। এজন্য নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করতে আরো বেশি হারে ডিসকাউন্ট বা অফার দিয়ে যাচ্ছে। এতে আরো বাড়ছে সম্পদ ও দায়ের ব্যবধান।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৩৪ জন। ক্রয়াদেশ বাতিল, ইভ্যালির দেওয়া ক্যাশব্যাক, বিক্রিত গিফটকার্ডের সমন্বয়ে এসব গ্রাহকদের ভার্চুয়াল আইডিতে (অ্যাকাউন্ট, হোল্ডিং, গিফটকার্ড, ক্যাশব্যাক) মোট ৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা মূল্যমানের ই-ভ্যালু সংরক্ষিত ছিল। অথচ ওই দিন শেষে ইভ্যালি.কম.বিডির ১০টি ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ২ দশমিক ৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, লোকসানে পণ্য বিক্রি করায় ইভ্যালি গ্রাহক থেকে অগ্রিম মূল্য নেয়ার পরও মার্চেন্টদের কাছে বকেয়া অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। গ্রাহক ও মার্চেন্টের বকেয়া ক্রমাগত বাড়ায় এক সময় বিপুল সংখ্যক গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা অর্থ না পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। এর ফলে সার্বিকভাবে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলের দেওয়া ইভ্যালির স্টেটমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল পজিশনের তথ্যানুযায়ী, গত ১৪ মার্চ ইভ্যালির মোট দায় (ইক্যুইটি বাদে) অপেক্ষা মোট সম্পদের ঘাটতি ৩১৫ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা, চলতি দায় (ইক্যুইটি বাদে) অপেক্ষা চলতি সম্পদের ঘাটতি ৩৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ইভ্যালির মোট সম্পদ প্রতিষ্ঠানটির মোট দায়ের মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং চলতি সম্পদের পরিমাণ চলতি দায়ের মাত্র ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। কোম্পানিটির ১ কোটি টাকার শেয়ার মূলধনের বিপরীতে ২৬ দশমিক ৫১ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ রয়েছে, কিন্তু কোনো দীর্ঘমেয়াদি দায় নেই।