সময় সংবাদ ডেস্কঃ
চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে ফিজিওথেরাপিস্ট মো. আখতারুজ্জামান মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
অপর আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ল্যাপরক্সপিক সার্জন প্রফেসর ডা. আবদুল ওহাব খান, ল্যাব এইড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিষ্ট ডা. মামুন আল মাহতাব ও বি.আর.বি হাসপাতালের হেপাটো বিলিয়ারী সার্জন প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী।
এদিন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। এরপর শুনানি শেষে আদালত মামলার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৪মে মামলার বাদী আখতারুজ্জামান মিয়ার ছেলে ডা. তৌফিক এনাম অসুস্থ হলে আসামি ডা. আবদুল ওহাব খানের কাছে নিয়ে যান। এরপর জরুরি ভিত্তিতে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে আবদুল ওহাব তার অধীনে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। এ সময় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে রোগীর গল ব্লাডারে স্টোন হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে, অপারেশন না করলে মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে জানান।
এরপর বাদী কোনো উপায়ন্তর না দেখে আসামির কথা বিশ্বাস করে অপারেশনের জন্য টাকা পয়সা প্রদান করেন। কিন্তু গত ৫ মে ডা.আবদুল ওহাব খান অপারেশন করে তার পরদিন ৬ মে রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর গত ৯ মে সন্ধ্যার পর আসামি গুরুতর অসুস্থ হলে ডা. আবদুল ওহাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। আবার পরীক্ষা নিরীক্ষার নির্দেশ দিলে আসামি আবদুল ওহাবের কথা মতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে এবং রিপোর্ট দেখে তিনি বলেন- রোগীর অপারেশনের স্থানে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে কি-না এজন্য এমআরসিপি পরীক্ষা করতে হবে। এরপর জরুরি ভিত্তিতে ১১ মে পরীক্ষা করে কাগজপত্র নিয়ে গেলে আসামি আবদুল ওহাব বলেন- অপারেশনের পর কমন বিলেডাক্ট চিকন হয়ে গেছে এবং অপারেশনের সময় একটি অসুবিধা হয়েছে। রোগীকে ল্যাব এইড হাসপাতালে আসামি ডা. মামুন আল মাহতাবের কাছে যেতে হবে। সেখানে ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোথাও এর চিকিৎসা করলে ভাল হবে না। এরপর মানুষিক চাপ সৃষ্টি করে আসামি ডা.আবদুল ওহাব রোগীকে ল্যাব এইড হাসপাতালে পাঠান। এরপর আসামি ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল রোগীর কতগুলো পরীক্ষা করেন।
পরীক্ষা শেষে আসামি ডা. মামুন আল মাহতাব রোগীর ‘ইআরসিপি উইথ স্টেনটিং’ করে ব্যর্থ চেষ্টা করেন। যার কারণে রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। এরপর রোগীর ‘প্যানক্রিয়াটিস’ বাড়তে থাকে এবং রোগী মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকলে আসামি ডা. মামুন আল মাহতাবকে বার বার ডাকলেও পাওয়া যায়নি। আসছি, দেখছি ইত্যাদি বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এক পর্যায়ে আসামি ডা. মামুন আল মাহতাব রোগীকে বি.আর.বি হাসপাতালের হেপাটো বিলিয়ারী সার্জন প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলীর কাছে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। এ সময় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জোর করে আসামি ডা. মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঠান। এরপর বাদী তার ছেলেকে সেখানে ভর্তি করেন। এ সময় আসামি ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন- রোগীর অবস্থা ভাল না। জরুরি ভিত্তিতে পেট কেটে অপারেশন করতে হবে। অন্যথায় রোগীকে বাঁচানো যাবে না। এ জন্য অধীক টাকা ব্যয় করতে হবে। কিন্তু রোগীর সবাই বি.আর.বি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চাননি। বরং তারা পিজি হাসপাতালে বা অন্য কোথাও চিকিৎসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জোর পূর্বক ভয়ভীতি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বি.আর.বি হাসপাতালে রেখে দেন।
এরপর গত ২৭ মে অপারেশনের জন্য প্রথম তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আসামি আবদুল ওহাব অপারেশনের নামে অর্থের জন্য কালক্ষেপণ করে ৩০ মে আবার অপারেশনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন। তখন বাদী ও সাক্ষীদের সন্দেহ হলে রোগীকে ছাড়পত্র দেয়ার জন্য আসামি মোহাম্মদ আলীকে বার বার অনুরোধ করলেও তিনি কোনো কর্নপাত করেনি। জোর পূর্বক টাকা আদায়ের জন্য হাসপাতালে রেখে দেন। কিন্তু রোগী মারা যাওয়ার পর আসামি ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন- রোগী ভাল আছেন। ভাল হয়ে যাবে। এইভাবে টাকা সংগ্রহ করেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুন কলাবাগান থানায় মামলা করতে গেলে মামলাটি গ্রহণ না করে আদালতে মামলাটি দায়েরের পরামর্শ দেন। আসামিরা পেনাল কোডের ৩০৪-ক ও ৩৮৬/৪০৬/৪২০ ধারায় সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছে। এমতাবস্থায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা ন্যায় বিচারের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন।