সময় সংবাদ ডেস্কঃ
সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশের এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নারী পাচারের ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে।
মামলার পর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন ১২ জন। এদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ১০ জনই ভারতের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাংলাদেশে গ্রেফতার ব্যক্তিদের আটজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মানব পাচারের ভয়াবহ চিত্র। ভারতে অবস্থানরত সবুজ এক চক্রের হোতা। তার হয়ে দেশে সমন্বয়কের কাজ করত টিকটক হৃদয় বাবু ও পঞ্চম শ্রেণি পাশ নদী আক্তার। আর সাতক্ষীরা সীমান্তের ধাবকপাড়ার কালিয়ানির স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজন তাদের এ কাজে সহযোগিতা করত।
টিকটক বাবু চক্রের সদস্য হিসেবে নদী দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। টার্গেট করা মেয়েদের ফাঁসাতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি নিজে যোগাযোগ করেন।
ভারতে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা অন্তত পাঁচ তরুণী ঢাকার হাতিরঝিল থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানেও আসামির তালিকায় নদীর নাম রয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার ভারতফেরত তিন তরুণী মামলা করেন, যাতে নদীকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এ সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা নদী। মালয়, হিন্দি, আরবিসহ চারটি ভাষায় কথা বলতে পারেন তিনি। তরুণীদের পটিয়ে পাচারকারী চক্রের ফাঁদে ফেলতে তার জুড়ি নেই। নারী পাচার সিন্ডিকেটের ‘টপ ওয়ান্টেড’ এই সদস্যকে এখন খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পুলিশের তদন্তেও নদীর নাম উঠে এসেছে। পুলিশ বলছে, তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আন্তর্জাতিক নারী পাচারচক্রের আরও তথ্য জানা যাবে। বর্তমানে নদী বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ভারতে নারী নির্যাতন ও নারী পাচারের ঘটনায় উভয় দেশেই মামলা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে ভারতীয় পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরাও এ বিষয়ে আমাদের কাছে থাকা তথ্য তাদের দিচ্ছি- যাতে চক্রের হোতাদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা যায়। পাশাপাশি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নির্যাতনের শিকার তরুণী ও এ ঘটনায় জড়িতদের দেশে আনতে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পাচারকারীদের হাতে পড়েছেন এমন বেশ কয়েকজন নদীর মাধ্যমে ভারতে চাকরির অফার পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। তবে সেখানে গিয়ে তারা বুঝতে পারেন, তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এই চক্রে নদী বড় ভূমিকা রাখছেন।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক বলেন, নারী পাচারের মূল হোতাসহ পুরো চক্রটির কেউই ছাড়া পাবে না। সীমান্তবর্তী যশোর, সাতক্ষীরা এলাকায় দফায় দফায় আমরা অভিযান চালিয়েছি এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।