ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশে টেনিসে খেলায় যে
কয়জনের নাম প্রথম সারিতে উঠে আসে তার মধ্যে অন্যতম এইচএম তাসওয়ার কলিন্স। এইচএম তাসওয়ার কলিন্সকে টেনিসের ফেরিওয়ালাও বলা হয়ে থাকে। কলিন্সের নাম শুধু দেশেই নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে তিনি কয়েকটি দেশেসহ বাংলাদেশ টেনিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। কখনো নিজে খেলে আবার কখনো কোচ হিসাবে দায়িত্ব পাল করেছেন। তাসওয়ার কলিন্স প্রথম বাংলাদেশী যিনি জাপানি টেনিস একাডেমির কো-ডাইরেক্টর কাম হেড কোচ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে কলিন্স মানে টেনিসের স্বর্ণ যুগও বলা যায়। কোচ হিসাবে তিনি যেমন দক্ষ তেমনি ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরণীয়।
রাজশাহীতে জন্ম হয়েছে বেশ কয়েকজন গুনী ক্রিকেটারের। দেশ ছাড়িয়ে তাদের খ্যাতি যেমন বিদেশ পর্যন্ত ঠিক তেমনি রাজশাহীর কলিন্সও টেনিসকে নতুন ধারায় পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বিদেশের মাটিতে। তিনি দেশের প্রথম একজন টেনিস খেলোয়াড় ও কোচ। যার হাত ধরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। টেনিসের একজন কোচ হিসাবে বেশ কযেক বছর চীনে ছিলেন। সেখানেও কোচ হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। টেনিস যোদ্ধাদের মতে বাংলাদেশ থেকে টেনিসের কোনো প্রশিক্ষককে যদি জাতীয় এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয় তাহলে কলিন্স থাকবেন প্রথম সারিতে।
টেনিসের খ্যাতিমান তারকার সাথে কথা বলে জানাযায়, শৈশবে টিভিতে টেনিস খেলা দেখে তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ভদ্র খেলা বলতে প্রথমেই টেনিসের নাম উঠে আসে। মাত্র ১০-১২ বছর বয়স থেকেই তিনি টেনিস খেলা শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন টেনিসের তারকা। মূলত ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেনিসে ছিল কলিন্স যুগ। রাজশাহীর এই কৃতি সন্তান সেই সময়কালে লাল সবুজের হয়ে আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা চারটি ডেভিস কাপে খেলেছেন। এরমধ্যে দুই বার শ্রীলংকায় এবং জাতীয় পর্যায়ে আটবারে র্যাংকিং ছিল এক ও দুই। ২০০৫ সাথে চাইনিজ স্পোর্টাস হুইল আর্ন্তাতিক টেনিস একাডেমির কোচ হিসাবে যোগ দেন তিনি। ক্যারিয়ারে ০৪ টি ডেভিস কাপে খেলেছেন কলিন্স। বাংলাদেশের শীর্ষ র্যাংকিংয়ে তিনি ৮বার ছিলেন। কলিন্স জাপানি টেনিস একাডেমির কো-ডাইরেক্টর কাম হেড কোচও ছিলেন। এই একাডেমি হয়ে দশ বছর যাবৎ বিভিন্ন দেশে টেনিস খেলতে শিষ্যদের নিয়ে যান তিনি। ঢাকায় আর্ন্তাতিক জুনিয়র টেনিসেও দুই শিষ্যকে নিয়ে খেলেছেন কলিন্স। চীনের অনুর্ধ্ব-১২ শীর্ষ বাছাই হু থান হানকে নিয়ে লড়েন তিনি।
রেইনবো টেনিস গার্ডেন (আরটিজি) ২০১০-২০১৯ সাল পর্যন্ত হেড কোচ ও কো-ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির অরেঞ্জ বল ১২-১৬ বছর বয়সী জুনিয়র কোচ হিসাবে দায়িত্ব পালন। বিশ^ র্যাংকিংয়ে থাকা চীনের টেনিস খেলোয়াড় ওয়াং কিয়াং, ডাব্রুটিএ র্যাঙ্কিংয়ের ২৭ তম এবং সুন ফানজিয়িং ডাব্লুটিএ র্যাংকিং ২০৭ থাকা খেলোয়াড়দের কোচ ছিলেন তিনি। তিনি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ২৪ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত আইটিএফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড কোর্স ওয়ার্কশপে অংশ গ্রহণ করেন। ২০১৪ অক্টোবর ২য়-৫ম আইটিএফ এশিয়ান বিএনপি পারিবাস কোর্সের ওয়ার্কশপ করেন। দক্ষতার দিক থেকে তিনি ইংরেজি, চীনা এবং বাংলা ভাষা পারদর্শী। আগামীতে টেনিসকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যেতে কাজ করছি বলে জানান কলিন্স। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার জন্য খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করছেন। প্রশিক্ষণ শুরু করেছি নতুন উদ্যোমে। প্রতিবছর যেন বাংলাদেশ থেকে টেনিস খেলোয়াড়রা বিভিন্ন দেশে খেলতে পারে তার জন্য সর্বাত্ম চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের প্রথম রাজশাহী থেকে তার ছাত্র ইমন বাংলাদেশ গেমসে ২০২১ সালে গোল্ড মেডেল পুরস্কার পান। যা রাজশাহীর টেনিস ইতিহাসে বিরল। এছাড়াও আহনাফ, মনতাসির এবং সিয়াম জাতীয় টুর্নামেন্ট অনুর্ধ্ব-১২, ২০২০ সালে রানারআপ হয়, অনুর্ধ্ব-১৪ একই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় রমজান শরিফ আরিফ এবং অনুর্ধ্ব-১৮, চ্যাম্পিয়ন হন ইমন। তিনি বলেন এসব খেলোয়াড়দের মাত্র আট মাস ট্রেনিং করার পর এতো ভাল ফলাফল করেছে। সেক্ষেত্রে তারা আর একটু সময় পেলে আরো ভাল কিছু করতে পারবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। এইচএম তাসওয়ার কলিন্স রাজশাহীর অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম টেনিস কমপ্লেক্স (রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্স) থেকেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তিনি একজন এই টেনিস কমপ্লেক্সের আজীবন সদস্য। এখান থেকেই তিনি পেয়েছেন জীবনের অনেক খ্যাতি।