নৌপথে ইউরোপে ৮০ জনকে পাচার করল মামা-ভাগনে - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

সোমবার, জুলাই ১২, ২০২১

নৌপথে ইউরোপে ৮০ জনকে পাচার করল মামা-ভাগনে


  

সময় সংবাদ ডেস্কঃ


এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর মধ্যপ্রাচ্যে যান ঢাকার কেরানীগঞ্জের মো. আশিক। লিবিয়ায় দুই বছর থাকার সময় মানবপাচার সিন্ডিকেটে জড়ান। এরপর ২০১৯ সালে দেশে ফিরে কেরানীগঞ্জে বসেই মানবপাচার ব্যবসা চালান। দুবাই থাকতেন আশিকের মামা রুবেল। মামার মাধ্যমে গড়ে তোলেন ‘রুবেল সিন্ডিকেট’। এরপর অনলাইন ভিসা, বাংলাদেশি সংগ্রহ ও নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দুবাইয়ে মানবপাচার করতেন আশিক।

‘রুবেল সিন্ডিকেট’-এ রয়েছে ২০-২৫ সদস্য। গত দুই বছরে ৮০ বাংলাদেশিকে ইউরোপে পাচার করেছেন চক্রটির সদস্যরা। আটক ও তাদের আত্মীয়দের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিলেছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন।


চক্রটির মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে মানবপাচারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন প্রধান সমন্বয়ক আশিক।


মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে মানবপাচারের আন্তর্জাতিক চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট রুবেল সিন্ডিকেটের প্রধান সমন্বয়ক ‘ইউরো’ আশিকসহ সাত সদস্যকে আটকের পর এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র‌্যাব।






শনিবার রাত ১টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত যৌথ অভিযানে মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের আটক করে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮।


আটকরা হলেন- মো. আশিক, আজিজুল হক, মিজানুর রহমান মিজান, নাজমুল হুদা, সিমা আক্তার, হেলেনা বেগম ও পলি আক্তার। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৭টি পাসপোর্ট, ১৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, দুটি এটিএম কার্ড, ১৫টি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমাদানের বই, দুটি হিসাব নথি, দুটি এনআইডি, ১০টি মোবাইল ফোন ও ৫৬ হাজার টাকা।


রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।


তিনি বলেন, ২৮ ও ২৯ জুন অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবিতে প্রায় ৪৩ জন নিখোঁজ হন। তিউনিশিয়ার উপকূলে বিধ্বস্ত নৌকা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ, সুদান, মিশর, ইরিত্রিয়া ও চাঁদের নাগরিক রয়েছে বলে জানা যায়। রোববার আরো ৪৯ বাংলাদেশি উদ্ধারের সংবাদ জানা গেছে।


র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি মানব পাচারের ঘটনায় র‌্যাব মানবপাচার চক্রের বেশ কয়েকজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রটি বিদেশি চক্রের সঙ্গে অবৈধভাবে ইউরোপে মানবপাচার করে আসছে। তিন ধাপে এ সিন্ডিকেট মানবপাচারের কাজ করছিল।


তিনি আরো বলেন, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই এ চক্রের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। বিদেশ গমনেচ্ছুদের পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ ও টিকিট কেনাসহ যাবতীয় কাজ সিন্ডিকেট নিজস্বভাবে সম্পন্ন করত। তবে পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথি পাচার চক্রের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেওয়া হতো। পরে তাদের এককালীন বা ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে ইউরোপের পথে পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ইউরোপ যেতে তারা ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার অধিক অর্থ নেয়। সাড়ে চার-পাঁচ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার আগে এবং বাকি টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার পর ভুক্তভোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে নেয়।


খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে লিবিয়া রুট ব্যবহার করছিল। মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের নিয়ে সাত-আটদিন অবস্থান করত। এ সময়ের ভেতরে লিবিয়ার বেনগাজিতে ভুক্তভোগীদের পাঠানোর জন্য এজেন্টরা ‘মারাকাপা’ ডকুমেন্ট দুবাইয়ে পাঠাতো। যা লিবিয়া যাওয়ার আগে দুবাইয়ে থাকা ভুক্তভোগীদের হস্তান্তর করা হতো। ওই ডকুমেন্টসহ বিদেশি এজেন্টদের সহায়তায় তাদের বেনগাজি পাঠানো হতো। লিবিয়া পর্যন্ত যারা অর্থ পরিশোধ করে তাদের স্বল্প সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে থেকে সরাসরি লিবিয়ায় পাঠানো হতো। প্রধান অভিযুক্ত রুবেল দুবাই বসে সিন্ডিকেটের সব কার্যক্রম মনিটরিং করে।


তিনি আরো বলেন, পাচারের শিকারদের ত্রিপলিতে পৌঁছানোর পর লিবিয়ার এজেন্টদের সহায়তায় গাজী, কাজী ও বাবুল নামের তিন বাংলাদেশি তাদের গ্রহণ করতেন। ভুক্তভোগীদের ত্রিপলিতে কয়েকদিন আটকে রাখা হতো। এ সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে থাকা প্রতিনিধি দিয়ে ভুক্তভোগীদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। এরপর ইউরোপে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের হস্তান্তর করা হতো। কোনো এক ভোরে কয়েকটি নৌযান লিবিয়া হয়ে তিউনিশিয়া উপকূলীয় চ্যানেল ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপের দিকে যাত্রা করতো। ভূমধ্যসাগরে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতো এবং জীবনাবসানের ঘটনাও অহরহ ঘটে।