সময় সংবাদ ডেস্কঃ
কোরবানির পশু থেকে দেশীয় চামড়া শিল্পের কাঁচমালের প্রায় অর্ধেক যোগান আসে। কিন্তু দুই বছর যাবত ঋণ পুনঃতফসিলের কারণে চামড়া যোগান নিতে না পারায় ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। এজন্য ঋণ পুনঃতফসিল শিথিল হওয়ায় ট্যানারি মালিকদের বিশাল অংকের ঋণ দেবে নয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, ২০২০ সালে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া কিনতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের বকেয়া অর্থের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে স্টক থাকা বা সহায়ক জামানত থাকা সাপেক্ষে বকেয়া ঋণ ৩ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করা যাবে। এক্ষেত্রে বকেয়া ঋণের ৩ শতাংশ অর্থ ডাউন পেমেন্ট বা এককালীন নগদ জমা দিতে হবে।
এ পদ্ধতিতে পুনঃতফসিলের পর ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গতবছরের কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রেখেছিল সেই পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ওই সব ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে চলতি বছর কোরবানির ঈদে জবাইকৃত পশুর চামড়া কিনতে নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট আদায় করতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে তুলনামূলক বেশি ঋণ পাবেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এটি হলে একদিকে মূল্যবান কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।
এদিকে রাজধানীর পোস্তার আড়তদাররা বলছেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদাররা পাবেন দেড়শো কোটি টাকার বেশি। গতবছর ট্যানারিগুলোর কাছে পাওনা পরিশোধ না কারায় নগদ টাকার সংকটে ছিল আড়তদাররা। যার প্রভাব পড়েছিলে কাঁচা চামড়া সংগ্রহে। তবে এ বছর সঠিক সময়ের মধ্যে নগদ অর্থ পাওয়ার আশা তাদের।
ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ সমন্বয়ের পর সামান্যই পাওয়া যায়। এ অবস্থায় আগের ঋণ সমন্বয় না করতে পারায় গতবছর ঋণ পায়নি অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা। এর ফলে আড়তদারদের পাওনা পরিশোধ করা যায়নি। এজন্য আড়তদার-ট্যানারি মালিকদের দেনা-পাওনা বাকি রয়েছে। তবে ব্যাংক ঋণ দিলেই ব্যাংকিং কর্মদিবসের মধ্যেই আড়তদারের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ব্যবসায়ী সূত্র বলছে, গত বছরের চামড়া কিনতে বিতরণ করা ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সর্বোচ্চ তিন বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করা সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার পশুর চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ৫৮৩ কোটি টাকার তহবিল জোগান দেবে রাষ্ট্রয়ত্তসহ নয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। পাশাপাশি চামড়ার বাজার দর ধরে রাখতে শর্তসাপেক্ষে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে গতবার নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এ কারণে চলতি বছর ওই ঋণ সমন্বয় করে নতুন ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকগুলো। কিন্তু স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ জানান, ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলো জানায়, গতবছর পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে। ওই ঋণ সমন্বয় করে এ বছর মোট ৫৮৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে তারা। এতে নতুন করে ব্যবসায়ীরা ৪০-৪৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ পাবেন না।
প্রাপ্ত তথ্যানুায়ী, গতবছর কাঁচা চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে জানিয়েছিল ব্যাংকগুলো। তবে এ টাকার একটি বড় অংশ ট্যানারি মালিকদের পুরনো ঋণ সমন্বয় করতে চলে যায়। ফলে গতবছর কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে মোট ৬৫ কোটি টাকা ঋণ পায় ব্যবসায়ীরা।
শাহিন আহমেদ বলেন, গতবারের মতো এবার ঘটলে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত কাঁচা চামড়া কিনতে পারবে না। এজন্য আমাদের চলতি বছর অন্তত ৪০০ কোটি টাকা নতুন ঋণ প্রয়োজন হবে।