কেমোথেরাপিতে চুল পড়ার কারণ | সময় সংবাদ |
স্বাস্থ্য ডেস্ক:
ক্যান্সার শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আতঙ্ক। যদি কেউ এই রোগে আক্রন্ত হন, তবে তার জন্য যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি জরুরি সেটি হচ্ছে মনের জোর। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি নেয়ার প্রয়োজন হয়।
কেমোথেরাপি চলাকালীন বা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে বডি হেয়ার লসের সমস্যা খুব পরিচিত। চুল পড়ে যাওয়া, ভ্রু উঠে যাওয়ার পাশাপাশি ত্বক কালো হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অধিকাংশ রোগী। যদিও এই সমস্যা সাময়িক, তার পরে স্বাভাবিক চুলও তৈরি হয়, ত্বকের রংও ফিরে আসে। মাঝের সময়টুকু আশপাশের তির্যক দৃষ্টি ও মন্তব্য এড়িয়ে মনের জোর রেখে এগোনো দরকার।
কেমোথেরাপিতে কেন চুল পড়ে যায়?
সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায় জানালেন, মানবদেহে হেয়ার সেলের মাল্টিপ্লিকেশন অনেক দ্রুত হয়। কেমোথেরাপি নেয়ার ফলে ওই সব কোষগুলো সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‘‘কেমোর প্রথম সাইকেলে না হলেও দ্বিতীয় বা তৃতীয় সাইকেল থেকেই রোগীর চুল উঠতে আরম্ভ করে। কেমো যত এগোয়, আরও বেশি মাত্রায় পড়তে থাকে চুল। অনেক সময়ে তাপমাত্রা কমিয়ে (স্ক্যাল্প কুলিং করে) কেমো দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও হেয়ার লস পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কেমো নেয়া রোগীদের দুই-তৃতীয়াংশই হেয়ার লসের মুখোমুখি হয়ে থাকেন,’’ বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়।
খাদ্যনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেমোথেরাপির ফলে। যে কারণে বমিও হতে পারে। ওরাল কেমোথেরাপি ড্রাগসের তুলনায় ইনট্রাভেনাস ড্রাগস চুল পড়ে যাওয়ার জন্য প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী। পাশাপাশি ত্বকেও পিগমেন্টেশন দেখা যায়। ত্বক ও নখ কালো হয়ে যায়। পুরোপুরি ভাবে এই দাগ নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তবে এই উপসর্গ চিরকালীন নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের স্বাভাবিক রং আবার ফিরে পান অধিকাংশ রোগীই।
প্রতিকার কী?
কেমোথেরাপিতে চুল পড়ে যাওয়া ও ফের চুল গজানোর মাঝামাঝি সময়টায় উইগ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। ব্যবহার শুরু করার ছ’-আট মাস পরে স্বাভাবিক চুলের বৃদ্ধি আরম্ভ হলে তার পরে আর পরচুলার দরকার হয় না। পরে গজানো চুলের ঘনত্ব প্রায় আগের মতোই থাকলেও আগের মতো দৈর্ঘ্য ফিরে পাওয়া যায় না সব সময়ে। যেহেতু এটি পার্মানেন্ট হেয়ার লস নয়, তাই ট্রান্সপ্লান্টের কথা এক্ষেত্রে খাটে না। যদি দেখা যায় কেমো শেষ হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ দিন পরেও স্বাভাবিক চুল ফিরে আসছে না, সেক্ষেত্রে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের কথা ভাবা যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
মার্কেটে কিছু দোকানে স্বাভাবিক চুল দিয়ে তৈরি করা ভালো মানের পরচুলা কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া বেসরকারি ক্লিনিকও রয়েছে, যেখানে উন্নত মানের উইগ তৈরি হয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মারফতও তা পাওয়া সম্ভব। ক্যান্সার রোগীদের জন্য হেয়ার ডোনেশনের ব্যবস্থাও রয়েছে, যদিও তা নিয়ে সচেতনতা এখনো বেশ কম।
হেয়ার ডোনেশন নিয়ে সচেতনতা
বিদেশে হেয়ার ডোনেশন নিয়ে সচেতনতা যথেষ্ট থাকলেও এ দেশে তা তেমন নেই। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার-রোগীদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার জানালেন, আমাদের রাজ্যে তথা সারা দেশেই শুধু হেয়ার ডোনেশন নয়, সামগ্রিক ভাবে ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা এখনও গড়ে ওঠেনি তেমন। ‘‘কেমো চলাকালীন রোগীর পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ যথেষ্ট সহমর্মী নয় এখনও। যা তাদের উপরে প্রবল মানসিক চাপ তৈরি করে। এর জন্য রিহ্যাবের ব্যবস্থা করে থাকি আমরা, যেখানে ক্যান্সার-সার্ভাইভারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে মনের জোর বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া হেয়ার ডোনার ও রোগীদের মধ্যেও সংযোগ স্থাপন করে থাকি। তবে হেয়ার ডোনেশনে সাধারণ মানুষের আরও অনেক বেশি এগিয়ে আসা দরকার,’’ বললেন ডা. সরকার।
হেয়ার ডোনেট করার সময়ে সেটি পরিষ্কার করে, শুকিয়ে নিয়ে প্যাক করে দিতে হয়। ঠিক উপায়ে স্টোর না করলে সেই চুলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একটি মাঝারি মাপের উইগ তৈরির জন্যও কয়েকজন হেয়ার ডোনারের প্রয়োজন হয়। ত্বকের ক্ষেত্রে যত দিন না স্বাভাবিক রং ফিরে আসছে, কনসিলার জাতীয় মেকআপ প্রডাক্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
ক্যান্সার রোগীদের পোস্ট-ট্রিটমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাহ্যিক রূপ ফিরিয়ে আনার সঙ্গে এক্সারসাইজের মাধ্যমে সার্বিক ভাবে সুস্থ থাকা ও সামাজিক জীবনে আগের মতোই অংশ নেয়া জরুরি।