"সাইকেলে ব্যাপক সাড়া, কমেছে ঝরে পড়ার হার | সময় সংবাদ"
সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর
দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল-কলেজে যাতায়াত সুবিধা অপ্রতুল। এতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়তে হতো মেয়েদের। সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে না পারায় ঝরে পড়েছে অনেকেই। সম্প্রতি স্কুল-কলেজে যাতায়াতে বাই সাইকেল ব্যবহার শুরু করেছে মেয়েরা। এতে মিলেছে ফল-বেড়েছে বাই সাইকেলের জনপ্রিয়তা। সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি মেয়েদের ঝরে পড়ার হারও কমেছে। ফলে দিনদিন মেয়েদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে বাই সাইকেল।
এক সময় মেয়েরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়লেও এখন এ জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে, বাই সাইকেল চালিয়ে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে মেয়েরা। এতে দিনদিন কমছে বাল্যবিয়ে, বাড়ছে মেয়েদের শিক্ষার হার।
দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে চিরিরবন্দর উপজেলার চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ শতাধিক। বিদ্যালয়টিতে ঐ উপজেলার ৭-৮টি গ্রামের মেয়েরা পড়াশোনা করতে আসে। চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা এখন দলবেঁধে নির্ধারিত ইউনিফর্ম আর পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে যাতায়ত করছে।
অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের ছাত্রীদের পড়াশোনার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে একটি সাইকেল। সন্তানদের পড়াশোনার নিশ্চয়তার পাশাপাশি কমেছে মা-বাবার দুশ্চিন্তা, সাশ্রয় হচ্ছে অর্থ।
চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মনিরা আক্তার বলেন, বান্ধবীরা মিলে দল বেঁধে বাই সাইকেলে স্কুলে যাই। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। প্রথম দিকে অনেকে অনেক কটু কথা শুনিয়েছে, এখন আর কেউ কিছু বলে না।
নবম শ্রেণির ছাত্রী শিমুল রায় কেয়া বলেন, আগে ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে স্কুলে যেতে দেরি হতো। আবার হেঁটে যেতেও অনেক কষ্ট হতো। এখন সাইকেল হওয়ায় সহজেই যাতায়াত করতে পারি।
চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাতাব সরকার বলেন, সময় ও অর্থ বাঁচাতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মেয়েদের বাই সাইকেল চালিয়ে যাতায়াতের জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকরাও স্বেচ্ছায় মেয়েদের বাই সাইকেল কিনে দিচ্ছেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। ঝরে পড়ার হার কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেড় শতাধিক ছাত্রী নিয়মিত বাই সাইকেলে স্কুলে যাতায়াত করে। এতে মেয়েদের পড়াশোনার মান ও হার ভালো হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা। এ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল-কলেজের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।