"মেয়েকে ধর্ষণ, স্ত্রীকে হাতুড়িপেটা-সিগারেটের ছেঁকা দেন মনোয়ার | সময় সংবাদ"
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
‘বিয়ের আগে বলা হয়েছিল, স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। বাড়িতে একাই থাকেন। কিন্তু বিয়ের পর এসে দেখলাম, আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রী আছেন। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আমার প্রায়ই ঝগড়া হতো। প্রতিদিনই আমাকে মারধর করত। শরীরে সিগারেটের আগুনের ছেঁকা দিত। হাতুড়ি দিয়েও পেটানো হয়েছে। একপর্যায়ে শরীরে ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
এভাবেই স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন স্ত্রী শিউলী বেগম (৪০)।
স্বামীর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি যশোরের চৌগাছার আফরা গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে। তার স্বামী মনোয়ার হোসেন উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামের কাদের হাওলাদারের ছেলে।
শিউলি বেগম জানান, মোবাইল ফোনে কথার সূত্র ধরে মনোয়ারের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হলে মেয়েকে নিয়ে থাকতেন বাবার বাড়িতে। মনোয়ার তাকে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখান। ২০২১ সালের ১ মে যশোরের একটি কাজী অফিসে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের আগে তাকে বলা হয়েছিল, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। তিনি নলছিটির কুড়ালিয়া গ্রামের বাড়িতে একাই থাকেন। কিন্তু সেখানে এসে দেখা যায়, ওই বাড়িতে মনোয়ারের প্রথম স্ত্রী রয়েছেন। এ সময় দুই স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
শিউলির অভিযোগ, কিছুদিন যেতে না যেতেই মনোয়ার তাকে (শিউলি) প্রায়ই নির্যাতন করতে থাকেন। এমনকি শিউলীর আগের সংসারের মেয়েকেও মারধর ও ধর্ষণ করেন। পরে মেয়েকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হন মনোয়ার। তাকে নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে যায়। হাতুড়ি দিয়ে পেটান। মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুনের ছেঁকা দেন। একপর্যায়ে গত ৯ জুন নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তিনি। পরদিন ১০ জুন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সঙ্গে দেখা করে স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ সুপার তাকে নলছিটি থানায় পাঠান।
এ ব্যাপারে শিউলির স্বামী মনোয়ার হোসেন বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি তাকে (শিউলি) হাসপাতাল থেকে নিতে এসেছি।
সিগারেটের আগুনের ছেঁকা ও হাতুড়ি পেটার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, যা কিছু হয়েছে, আমরা সমাধান করে নেব।
নলছিটি থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, পুলিশ সুপার স্যার আমার কাছে ওই নারীকে পাঠালে আমি তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলি। পরে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই থানায় ডেকে পাঠাই। তারা বিষয়টি মীমাংসা করে নিয়েছেন।