"অনন্ত যৌবনের’ আশায় খুন, কবিরাজকে এনে দিলেন বিশেষ অঙ্গ | সময় সংবাদ"
যশোর প্রতিনিধি
বিয়ে করলেও সুখী হতে পারেননি ৪০ বছর বয়সী লিটন মালিতা। অসুখী জীবন নিয়েই করছিলেন সংসার। নিজের এমন সমস্যার কারণে আট বছর ধরে কবিরাজের চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন। একদিন লিটনকে শর্ত দিয়ে বসেন কবিরাজ। কোনো পুরুষের বিশেষ অঙ্গ ও চোখের মণি সংগ্রহ করতে পারলেই অনন্ত যৌবনের অধিকারী হওয়ার আশ্বাস দেন। লিটনও এ শর্ত মেনে নেন।
শুরু করেন অনন্ত যৌবন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা। নানাভাবে চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন বৈবাহিক জীবনে অসুখী এ মানুষটি। তবে শেষমেশ একজনকে হত্যার পর কবিরাজের কথামতো বিশেষ অঙ্গ ও চোখের মণি সংগ্রহ করেন। কিন্তু রেহাই পাননি। ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে।
ঘটনাটি যশোরের। বুধবার কৃষক নকিম উদ্দিন মোল্লা হত্যা মামলার প্রধান আসামি লিটন মালিতাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে নিহতের অঙ্গবিশেষও উদ্ধার করা হয়েছে। এ হত্যার নির্দেশদাতা কবিরাজ আব্দুল বারেককেও গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে ৩০ মে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রাম থেকে নকিম উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন ছিল। এ ঘটনায় বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন নিহতের ছেলে মাজহারুল। মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লিটন জানান, যৌবনশক্তি ফিরে পাওয়ার আশায় কবিরাজের নির্দেশে নকিমকে হত্যা করেছেন তিনি। কৃষক সেজে তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটান।
তিনি আরো জানান, বৈবাহিক জীবনে অসুখী তিনি। আট বছর ধরে কবিরাজ আব্দুল বারেকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কোনো পুরুষের বিশেষ অঙ্গ ও চোখের মণি সংগ্রহ করতে পারলে তিনি অনন্ত যৌবনের অধিকারী হবেন বলে কবিরাজ তাকে জানান। এ কারণে তিনি কখনো রিকশাচালক, কখনো কৃষি শ্রমিক, কখনো দিনমজুর হয়ে কাজ করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। কিন্তু তাদের হত্যা করে শরীরের ওই সব অঙ্গ সংগ্রহ করতে পারেননি। সর্বশেষ নকিম উদ্দিনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর অঙ্গগুলো সংগ্রহ করেন।
কবিরাজ আব্দুল বারেক বলেন, আমি ১৭ বছর ধরে কবিরাজি করছি। লিটন আট বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে। সাংসারিক জীবনে তিনি প্রচণ্ড অসুখী বলে আমাকে জানান। স্ত্রীকে সুখী করতে পারেন না। আমি তাকে ওই তিনটি অঙ্গ অর্জন করতে বলি। আমি তাকে জীবিত মানুষ হত্যা করে অঙ্গ আনতে বলিনি। বলেছি যেখানে পোস্টমর্টেম হয় সেখান থেকেই ম্যানেজ করা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, বুধবার অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি লিটনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। একই সঙ্গে রাতে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর থেকে কবিরাজ আব্দুল বারেককে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, কবিরাজের নির্দেশনায় বিকৃত মানসিকতার লিটন অনন্ত যৌবন পাওয়ার আশায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটান। ২৬ মে বাঘারপাড়ার ছাতিয়ানতলা বাজারে কিষান হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার আগে নকিম উদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২৯ মে রাতে তাকে টার্গেট করে কবিরাজের সঙ্গে তিনি মোবাইলে যোগাযোগ করেন। পরে তাকে খুন করে শরীরের ওই অঙ্গগুলো নিয়ে পালিয়ে যান।