চালের মজুত জানতে ছয় প্রতিষ্ঠানকে চিঠি | সময় সংবাদ
সময় সংবাদ ডেস্ক:
চালের মজুত জানাতে বড় ছয় প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। চালের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকার আগামী সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের মজুত চালের তথ্য জানাতে বলেছে। বৈঠকে ছয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি চাল মিল মালিকদেরও ডাকা হয়েছে।
গত সোমবার মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম এত বেশি কেন? তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আকিজ, সিটি, এসিআই, বসুন্ধরা, স্কয়ারসহ ছয়টি গ্রুপের চালের মজুত পাওয়া গেছে। এমনকি স্কুলের শিক্ষকদের কাছেও চালের মজুত পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, বোরোর ভরা মৌসুমে চালের সরবরাহে কোনও ঘাটতি নেই, কিন্তু কেন চালের দাম বাড়ছে? এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলেছেন মন্ত্রী।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ চালের মজুত জানাতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আগামী সোমবার আমরা বড় ছয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মিল মালিকদের ডেকেছি। তারা গত এক মাসে কি পরিমাণ ধান-চাল কিনেছে সে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। চালের অবৈধ মজুত করে কাউকেই বাজার অস্থিতিশীল করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে চালের অবৈধ মজুতের সন্ধানে মাঠে নেমেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক টিম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন। রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এখনো অভিযানের সুফল মেলেনি। গতকাল শুক্রবারও রাজধানীর বাজারে বাড়তি দরেই চাল বিক্রি হয়েছে। বোরোর ভরা মৌসুমে চালের এই চড়া দামে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের মধ্যে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬২ থেকে ৭৫ টাকা, মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা ৫২ থেকে ৬০ টাকা ও মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেশি। অথচ বোরোর এই ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা।
গতকাল রাজধানীর বড় পাইকারি বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে চালের মূল্য তালিকায় অসঙ্গতির কারণে আনোয়ার ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা, মদিনা রাইস এজেন্সিকে ৫০ হাজার টাকা, সততা ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা ও সাইকা রাইস এজেন্সিকে ২০ হাজার টাকাসহ চার প্রতিষ্ঠানকে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে অন্য ব্যবসায়ীরা জরিমানা এড়াতে দোকান থেকে সরে পড়েন। এ
র আগে গত ৩১ মে অভিযানের সময়ও তারা একই কাজ করেছিলেন। গতকাল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দোকান মালিকদের দোকানে ফিরে আসতে বারবার অনুরোধ করলেও তারা শোনেনি। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস ইত্তেফাককে বলেন, যারা পালিয়ে গেছেন তারা বাঁচতে পারবেন না। কারণ, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না।
তিনি বলেন, অভিযানে এই মার্কেটে আমরা বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছি। ব্যবসায়ীরা মিল থেকে কী দরে চাল কিনে এনেছেন সেসব ডকুমেন্টস দেখাতে পারেননি। দোকানগুলোর চালের মূল্যতালিকায় যে দাম দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে বিক্রয় রশিদের কোনো মিল নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনিয়ম করে পার পাওয়া যাবে না। এখন শুধু সতর্ক ও জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সংশোধন না হলে পরে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
বোরোর ভরা মৌসুমে এখন দেশের হাটবাজারে ধান-চালে সয়লাব। প্রতি বছর এ সময় চালের দাম কমে আসে। কিন্তু এবার উলটো বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অতি বৃষ্টি, ঝড় ও পাহাড়ি ঢলে ধান পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মোট চালের উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, অনেকে বলার চেষ্টা করছেন বৃষ্টিতে ও বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে, আসলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে যে তথ্য এসেছে, তাতে দেখা গেছে, অতিবৃষ্টি, ঝড় ও পাহাড়ি ঢলে মোট ৭৮ হাজার ৯৮৭ টন চাল নষ্ট হয়েছে। যা মোট চালের উৎপাদনের তুলনায় খুবই কম। এ বছর ২ কোটি ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৬৩ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ২ কোটি ৮ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৬৩ টন। তাই এখন পর্যন্ত ঝড়, বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়েছে তাতে মোট চাল উৎপাদনে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র এটাকে পুঁজি করে চালের বাজার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে।