"ডিপোতে বিস্ফোরণ: ‘নাশকতা’র দাবি কর্তৃপক্ষের | সময় সংবাদ"
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দাহ্য রাসায়নিক ‘হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড’কে দুষলেও এটি ‘নাশকতা’ বলে দাবি করেছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে এমন দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আজিজুর রহমান
তিনি বলেন, ডিপোতে আট থেকে নয়শ’ কনটেইনার ছিল। কোনোটিই বিস্ফোরিত হয়নি। একটি কনটেইনারে কেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখানে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্ট।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ডিপো থেকে কোনো কনটেইনার বের করতে কিংবা প্রবেশ করাতে কাস্টমসের অনুমতি নিতে হয়। এখানে যদি কোনো বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ থেকে থাকে, তা কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানার কথা।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, একই মালিকের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের ডিপোতে ৩৩টি কনটেইনারে ‘হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড’ মজুদ করা হয়েছিল। সেখান থেকে ১৬টি কনটেইনার কয়েকদিনের মধ্যেই পাকিস্তানে রফতানি হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে, ঘটনার শুরু থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলে আসছেন- প্রথাগতভাবে তারা পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবে ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকার বিষয়টি কেউ তাদের জানায়নি। জানলে আরো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে ফোম ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হতো। তাছাড়া তাদের ৯ কর্মীকে জীবন দিতে হতো না।
অন্যদিকে, ডিপোতে রাসায়নিক দ্রব্য থাকার বিষয়টি তাদের অজানা বলে জানায় বিস্ফোরক অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফতর।
বিস্ফোরক অধিদফতর চট্টগ্রামের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কনটেইনার ডিপোতে বিপজ্জনক পণ্য বা রাসায়নিক রাখার কোনো অপশন নেই। সংশ্লিষ্ট অধিদফতর কিংবা প্রক্রিয়া অনুসরণ করার আগে এসব বাইরে রাখতে হয়। এসবের কিছুই করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তাহলে ধরে নেওয়া হবে- এখানে অন্য কোনো বিপজ্জনক পণ্য আনা হয়েছে যা কাস্টমস রেজিস্ট্রারই করেনি। এমনকি এ বিষয়টিতেও আমাদের জানানো হয়নি।
একই প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, এ রাসায়নিক দ্রব্যের অনুমতি কিংবা এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি ডিপো কর্তৃপক্ষ। আমরা জানিওনা সেখানে রাসায়নিক দ্রব্য মজুদ ছিল।
শনিবার রাত ৮টার দিকে ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতর আগুন লাগে। খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক থেকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থল থেকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের অনেক বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ার খবরও পাওয়া যায়।
বিস্ফোরণ ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এছাড়া দগ্ধ ও আহত হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন শতাধিক।