রাঙ্গামাটিতে লাখো পূর্ণ্যার্থীর ঢল, কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৩

রাঙ্গামাটিতে লাখো পূর্ণ্যার্থীর ঢল, কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন

রাঙ্গামাটিতে লাখো পূর্ণ্যার্থীর ঢল, কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন
রাঙ্গামাটিতে লাখো পূর্ণ্যার্থীর ঢল, কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন


মহুয়া জান্নাত মনি, রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

শান্তি ও মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে লাখো পুণ্যার্থীর শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যের মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ৪৮তম কঠিন চীবর দানোৎসব রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে চীবর উৎসর্গের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।


শুক্রবার দুপুরে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার প্রাঙ্গণে লাখো বৌদ্ধ ধর্মীয় সমাবেশে প্রয়াত পার্বত্য ধর্মীয় গুরু বনভন্তে স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘণ্টায় প্রস্তুতকৃত চীবর রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের হাতে চীবর উৎসর্গ করেন, রাঙ্গামাটি সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায়। চীবর উৎসর্গের সময় ভক্তদের সাধু, সাধু, সাধু কণ্ঠধ্বনিতে রাজবন বিহারের সমগ্র আশেপাশে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।


এর আগে রাজবন বিহার প্রাঙ্গনে আগত লাখো লাখো পুর্ণার্থীর সামনে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের প্রধান মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তের অমৃত কথা অডিও উপস্থাপন করা হয়। পরে আগত দায়ক দায়িকার উদ্দেশ্যে স্বধর্ম দেশনায় দেন, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এসময় তিনি কৌশল কর্ম, সৎ চেতনা ও সৎ জীবন নিয়ে জীবন যাপন করার জন্য হিতোপোদেশ দেন।


চীবর দান উৎস ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, জেলা সিভিল সার্জন নিহার রঞ্জন নন্দী, রানী ইয়েন ইয়েন, সাবেক পার্বত্য উপমন্ত্রী মনিস্বপন, সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী উষাতন তালুকদার, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সহ সভাপতি নিরূপা দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসাসহ দেশি-বিদেশি পুণ্যার্থীরা অংশ নেন।


দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কঠিন চীবর দান ছাড়াও, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, কল্পতরু দান, বিশ্বশান্তি প্যাগোডার অর্থ দান, হাজার প্রদীপ দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সূতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান। 


এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বেইন ঘর উদ্বোধন ও চরকায় সুতা কাটার মধ্যদিয়ে রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী ৪৮তম কঠিন চীবর দানোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। রাতভর তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সূতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে চীবর বুননের কাজ। দুপুরে ভিক্ষু সংঘকে সেই চীবর (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান করার মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত রাজবন বিহারে দুই দিনের চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়।


রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন. বৌদ্ধদের যত ধরনের দান রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে পুণ্যের দান হলো কঠিন চীবর দান। এজন্য কঠিন চীবর দানোৎসবকে দানোত্তম চীবর দান উৎসব বলা হয়ে থাকে। এ বছর রাজবন বিহারে প্রায় দুইশ বেইন ও দেড় শতাধিক চরকার সাহায্যে ৬ শতাধিক দায়ক-দায়িকা চীবর বুননের কাজে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া এ বছর ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে ৭৬জনসহ আমেরিকা, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা থেকে বহু পুণ্যার্থী রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ৪৮তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছেন।


রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সহ সভাপতি নিরুপা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তর এই ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় প্রাচীন নিয়মে। প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উৎসর্গ করা হয়। জগতে যত প্রকার দান রয়েছে তার মধ্যে এ চীবর দানই হচ্ছে সর্বোত্তম দান। এতে পূর্ণতা লাভ করা যায়।


এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দুইদিন ব্যাপী সর্ববৃহৎ ৪৮তম কঠিন চীবর ধর্মীয় উৎসবে সকল স¤প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছিল রাজবন বিহার। বিহার প্রাঙ্গণের আশেপাশে এলাকায় হরেক রকম জিনিস নিয়ে পরশা সাজিয়ে বসেছে বসেছে দোকানীরা।


অন্যদিকে, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিরীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষরা যাতে সুষ্ট সুন্দর পরিবেশে বৃহৎ এই উৎসব পালন করতে পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।


১৯৭৬ সাল থেকে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে চীবর দান হয়ে আসছে। এ উৎসবে যোগ দিতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে লাখো মানুষ ভিড় জমায় রাজবন বিহারে। আর এ কঠিন চীবর দান উৎসবের অন্যতম উপলক্ষ হলো পারস্পরিক মৈত্রীভাব গড়ে তোলা। আর রাতে রাজবন বিহারে ফানুস উড়িয়ে শেষ হবে এই কঠিন চীবর দান উৎসবের আয়োজন।


উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। পুণ্যবতি সেবিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সূতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুঁতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান।




Post Top Ad

Responsive Ads Here