কবর থেকে ছেলের লাশের কঙ্কাল তুলে পিতার প্রতিবাদ |
সোহেল হোসেন লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলতে ছেলে হত্যার বিচার ও প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের দাবিতে কবর থেকে লাশের কঙ্কাল তুলে তিন ঘণ্টা বাজার প্রদক্ষিণ করেছেন দিনমজুর পিতা মনির হোসেন। পরে ইউএনওর নির্দেশে ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্য কঙ্কালকে পুনরায় কবর দেওয়া হয়। এই ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুর ১২টার সময় ৮নং দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মিয়ারহাট এলাকা মেঘনার পাড়ে এই ঘটনা ঘটে।
গ্রামবাসীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকালে নিহত রাসেলের পিতা মনিরকে মারধর করে তার সহোদর ভাই বাবুল বেপারি। এই সময় মনির চিৎকার করে বলেন, বাবুলই তার ছেলেকে হত্যা করেছে। রাহুল নামের একজনকে ফাঁসিয়ে বাবুল ও একই ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল টাকা ও জমি আত্মসাৎ করেছেন। ওই সময়ে জমি ও ১২ লাখ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নজরুলের সহযোগিতায় বাবুল বেপারি এক নং আসামি আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল রাহুলসহ অন্য আসামিদের উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাইয়ে দেন।
তারা আরও বলেন, জমি ও টাকা না পেয়েই হয়তো এ কাণ্ড করতে পারেন মনির। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ছেলে হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধনও করেছিলেন নিহত রাসেলের মা ফাতেমা বেগম ও পিতা মনির হোসেনসহ স্বজনরা।
তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল ও বাবুল বেপারি তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল হোসেন বলেন, নিহত কিশোর রাসেলের লাশের কঙ্কাল কবর থেকে তুলে একটি টুকরিতে করে মাথায় নিয়ে ছেলে হত্যার বিচার ও মূল হত্যাকারী বাবুলকে আটকের দাবিতে মিয়ারহাট বাজার ঘুরে বেড়ান দিনমজুর মনির হোসেন ভুট্টু বেপারি। খবর পেয়ে ইউএনওকে জানিয়ে চেয়ারম্যানসহ আমরা মনিরকে বুঝিয়ে আবার কঙ্কালগুলো কবর দিয়েছি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার, মাছঘাট দখল ও ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে শাহজালাল রাহুল ও নজরুল ইসলাম গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। চলতি বছরের গত ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে চরবংশীর মিয়ারহাটের রাহুল মাছঘাটে পাশের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের ভাই বাবুল বেপারির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল রাহুলের মাছঘাটের ম্যানেজার ফারুক কারীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও কথা-কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় রাসেল হোসেন ছুরিকাঘাতে নিহত হয় এবং ১০ জন আহত হয়।
এ ঘটনায় রায়পুর থানায় নিহত রাসেলের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে শাহজালাল রাহুলসহ ৯ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় শাহজালাল রাহুলসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। বর্তমানে সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন।
এ বিষয়ে রায়পুরের হাজিমারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনাস্থল গিয়ে মনির হোসেনকে বুঝিয়ে লাশের কঙ্কাল কবর দেওয়া হয়। কিশোর ছেলে হত্যা মামলায় বাবুল বেপারির নাম নেই। তারপরও যদি মনির বেপারি লিখিত অভিযোগ দেন তার ছোট ভাই বাবুল বেপারির বিরুদ্ধে, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।