রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান শুরু - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৩

রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান শুরু

 

রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান শুরু
রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান শুরু

মহুয়া জান্নাত মনি, রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

দেশের বৌদ্ধ ধর্মীয় স¤প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় তীর্থস্থান রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বেইন ঘর ও সুতা কাটার মধ্যদিয়ে মহামতি বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে শুরু হয়েছে দু’দিনব্যাপী ৪৮তম কঠিন চীবর দানোৎসব। রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারের চীবর দান উৎসবই পার্বত্যাঞ্চলে বৌদ্ধদের বৃহত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব।


বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে বেইন ঘর উদ্বোধন করেন, পূজ্য বনভন্তের শিষ্যসংঘের প্রধান ও বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। পরে চড়কায় তুলা থেকে সুতা কাটা উদ্বোধন করেন, রাঙ্গামাটি নারী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা চাকমা।


এসময় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, সহ সভাপতি নিরুপা দেওয়ান, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসাসহ হাজারো পূর্ণার্থী অংশগ্রহন করেন।


এর পর শুরু হয় ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিকতা। এবার প্রায় দুইশত বেইনে ৮ শতাধিক দায়ক-দায়িকা অংশ নেয় কঠিন চীবর প্রস্তুতের কাজে। সুতা সিদ্ধ ও রং করা, সুতা টিয়ানো, সুতা শুকানো, সুতা তুম ও নলীতে ভরা, বেইন টানা বেং বেইন বুননের মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবার সারা রাত অতিক্রম করে দায়ক-দায়িকারা চীবর তৈরী করেন।


রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান জানান, এ বছর ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে ৭৬জনসহ আমেরিকা, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা থেকে বহু পুণ্যার্থী রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ৪৮তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করছেন।


আগামীকাল ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রস্তুত করা হয় এই পূর্ণময় চীবর রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবিরের হাতে কঠিন চীবরটি উৎসর্গের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চিবর দানোৎসব।


অন্যদিকে, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিরীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষরা যাতে সুষ্ট সুন্দর পরিবেশে উৎসব পালন করতে পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।


উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সূতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান। পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধরা এ উৎসব পালিত হয় প্রাচীন নিয়মে। প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উৎসর্গ করা হয়।


রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে সর্বপ্রথম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। সেই থেকে প্রত্যেক বছর রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারসহ তিন পার্বত্য জেলার রাজবন বিহারের শাখাসমূহে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পাদন করা হয়ে থাকে।


বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরীর প্রচলন করেছিলেন। প্রতি বছর আষাড়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সাল থেকে বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে ৪৮ বছর ধরে কঠিন চীবর দান উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। 



Post Top Ad

Responsive Ads Here