ঝিনাইদহে পিবিজিএসআই স্কিমের কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩

ঝিনাইদহে পিবিজিএসআই স্কিমের কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

ঝিনাইদহে পিবিজিএসআই স্কিমের কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ
ঝিনাইদহে পিবিজিএসআই স্কিমের কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহায়তায় জাল ভাউচারের মাধ্যমে ঝিনাইদহে পারফরমেন্স বেজড গ্রান্ডস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস (পিবিজিএসআই) স্কিমের কোটি কোটি টাকা লোপাটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কিমের খাতভিত্তিক খরচ না করে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা তুলে নিয়েছে। 


এই স্কিমের আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার ১০২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ৫০ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। পারফরমেন্স বেজড গ্রান্ডস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস স্কিমের ওয়েবসাইট সুত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রথম ধাপে ঝিনাইদহ জেলার ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা করে মোট ২৭ কোটি ৫ লাখ ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই নিয়মে ২৩ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। 


স্কিম পরিচালক চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ সাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহে জবাবদিহি অনুদান হিসেবে এ সব অর্থ ৫টি খাতে ব্যায় করতে বলা হয়। প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে ৫লাখ টাকা সরাসরি পাঠিয়ে দফাওয়ারি খাতে ব্যায় করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ৫টি খাতের মধ্যে ছিল শিক্ষক প্রণোদনা হিসেবে এক লাখ টাকা, বইপত্র, লাইব্রেরী, শিক্ষা উপকরণ ও গবেষনা সরঞ্জাম হিসেবে দেড় লাখ টাকা, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামুলক পৃথক শৌচাগার, নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণ ও ছাত্রী কমনরুমের উন্নয়নে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যায় ৭৫ হাজার টাকা এবং সরকার কর্তৃক স্বীকৃত প্রতিবন্ধিতার মাত্রা অনুযায়ী অগ্রাধীকার চাহিদা সম্পন্ন প্রতিবন্ধিকে ৫০ টাকা সহায়তা দিতে বলা হয়।


এর মধ্যে বইপত্র, লাইব্রেরী, শিক্ষা উপকরণ ও গবেষনা সরঞ্জাম ক্রয় করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করতে বলা হয়। কিন্তু উল্লেখিত খাত বিহির্ভুত পুরাতন প্রকাশনার বই কেনার অভিযোগ রয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যায়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কথা বলা হলেও তা করা হয়নি। খাত ওয়ারি এসব টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে পটেকস্থ করা হয়েছে। 


হরিণাকুন্ডুর সোনাতনপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দীন জানান, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের টাকা বন্টন করতে আসলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে এই খাত থেকে যাতায়াত খরচ ও সম্মানী দিতে হয়েছে। 


এদিকে সোনাতনপুর হাই স্কুলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, তার সাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দীন পিবিজিএসআই স্কিমের দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গবেষনা সরঞ্জামাদী কেনার নামে দুইটি ল্যাপটপের ডিসপ্লে কেনা দেখিয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যায় ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে নিজে চিকিৎসা হয়েছেন। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক জানান, পিবিজিএসআই স্কিমের টাকা স্কুল ফান্ডে আসার ১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা জোর করে ভাউচার নিয়ে নেন। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। সরজমিন সদর উপজেলার হরিশংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় তাদের লাইব্রেরীতে পুরাতন বই ও আসবাবপত্র দেখিয়ে ভুয়া ভাউচার করা হয়েছে। একই ভাবে হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ভুয়া ভাউচারে টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে। মহেশপুরের খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পিবিজিএসআই স্কিমের টাকা দিয়ে ভবন রং করা হয়েছে। অথচ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের পৃথক কমনরুম ও শৌচাগার নেই। 


মহেশপুরের মালাধরপুর মাদ্রাসায় পিবিজিএসআই স্কিমের টাকা দিয়ে সুপারের ব্যক্তিগত শৌচাগার নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া ওই মাদ্রাসায় প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী না থাকা সত্তেও হুইল চেয়ার কেনা হয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যায় ৭৫ হাজার টাকা সভাপতি ও সুপার ভাগাভাগী করে নিয়েছেন। 


মহেশপুরের বাকসপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাইব্রেরীর বই কেনা এবং ছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামুলক পৃথক শৌচাগার, নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণ ও ছাত্রী কমনরুমের উন্নয়নে দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এদিকে কালীগঞ্জ ও শৈলকুপা উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিবিজিএসআই স্কিমের টাকার কোন হদিস নেই। 


কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন জানান, এ বিষয়ে দ্বিতীয় ধাপের বরাদ্দের কোন চিঠি পাননি। অথচ এই টাকা ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। 


এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, পিবিজিএসআই স্কিমের টাকা যদি কেউ খাত ভিত্তিক ব্যায় না করে থাকে তাবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


Post Top Ad

Responsive Ads Here