![]() |
জয়পুুরহাটে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও হানাদার মুক্ত দিবস পালিত |
নিরেন দাস,জয়পুুরহাট জেলা প্রতিনিধি:
নানা কর্মসূচী ও বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) জয়পুরহাটে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হয়।
পাগলাদেওয়ান হাজারো শহীদের বধ্যভুমিতে সকাল ৮টায় পুষ্প্যস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সূচনা করেন জেলা প্রশাসন। পরে জেলা পরিষদ, জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, চকবরকত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এখানে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী।
বক্তব্য রাখেন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কে এম এ মামুন খান চিশতী, সিভিল সার্জন ডা: আকুল উদ্দিন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ইউনিট কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন, সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক আমিনুল হক বাবুল প্রমূখ। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবশেন করেন এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদারদের হটিয়ে ”জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁকে ঝাঁকে ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও উল্লাসের মধ্যে দিয়ে জয়পুরহাটের ডাক বাংলোতে বেলা ১১ টায় প্রবেশ করে। হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এদেশিয় দোসর রাজাকার আলবদররা তখন পালিয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটে যায় জীবন বাঁচাতে। জয়পুরহাটের ডাক বাংলো প্রাঙ্গন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ’জয়বাংলা’ শ্লোগানে কেঁপে ওঠে।
সমবেত কন্ঠে ’আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় কেতন সোনালী বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবলু (বাঘা বাবলু)। এই স্বাধীনতার জন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক মা-বাবা, ভাই-বোনকে। স্বজনদের হারিয়ে অনেকেই এখনও শোকে পাথর হয়ে আছেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকে দেশের অনেক জেলা যখন পাক-হানাদার মুক্ত হতে থাকে তখনও যুদ্ধ চলে জয়পুরহাটে। ৯ মাস ধরে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায় এখানে।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে নিয়ে এসে ১০ হাজারের বেশী মানুষকে ব্যানট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় জয়পুরহাটের পাগলা দেওয়ানে। এখানে শুয়ে আছে কত মায়ের অজানা সন্তান। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বদ্ধভূমি এই পাগলা দেওয়ান। এখানে পাক হানাদার বাহিনীর একটি পরিত্যাক্ত বাংকার এখনও হত্যা যজ্ঞের ভয়াল স্মৃতি বহন করছে। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচে আসা অনেকেই এখনও সেই করুন স্মৃতি বহন করছেন।
এছাড়াও কড়ই কাদিপুর গ্রামে ৩শ ৭১ জন মৃৎ শিল্পী (কামার-কুমার) কে গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় দোশর রাজাকার আল বদর বাহিনীর সদস্যরা। এখানে একটি বধ্যভূমি রয়েছে। ১৯৭১ সাল তথা মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ রাখার জন্য জয়পুরহাট শহীদ ডাঃ আবুল কাসেম ময়দানে ৭১ ফুট উচ্চ শহীদ স্মৃতি বিজয় স্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও জয়পুরহাট পাক হানাদারদের নিকট থেকে মুক্তির এই দিনটিকে স্মরণ করে কড়ই-কাদিপুর ও পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি স্মৃতি সৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসন সহ জেলার বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো।