হুইপ স্বপনের সম্পদ ও ব্যবসার পরিমাণ বেড়েছে |
পর্ব-০১:
নিরেন দাস,জয়পুুরহাট প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জয়পুরহাট -২ আসনের সংসদ সদস্য ও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সম্পদ ও ব্যবসার পরিমাণ বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে ব্যাংকের ঋণ। একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে নগদ রয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে এক লাখ টাকা। পাশাপাশি স্বপনের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে পাঁচ কোটি ১২ লাখ ৪৭৪ দশমিক ৯১, বন্ড ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ আছে ৯৯ কোটি ৫২ হাজার ৯০০ ও তার স্ত্রীর নামে বন্ড, স্টক এক্সচেঞ্জে আছে ছয় কোটি সাত লাখ ৮৩২ দশমিক ৪৩ টাকা। তার কাছে রয়েছে ৬৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৪৬ টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার জিপ গাড়ি।
তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জমা করা হলফনামা মতে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে নগদ অর্থ ছিল ১০ লাখ টাকা এবং তার স্ত্রী মেহবুবা আলমের কাছে নগদ অর্থ ছিল না। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৫৭ হাজার ৪০০, বন্ড ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ ছিল ছয় লাখ ১৯ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছিল চার লাখ ৮৫ হাজার, বন্ড, স্টক এক্সচেঞ্জে ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার, পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেট ও সঞ্চয়পত্রে স্থায়ী আমানত ৫০ হাজার টাকা।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে ছিল ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার জিপ গাড়ি, তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫০ ভরি স্বর্ণ, অর্জনকালীন সময়ে ইলেকট্রনিক জিনিসপত্রের দুটি টিভি, দুটি ফ্রিজ, ডিভিডি, টোস্টার, ওভেন, দুটি এসির মূল্য ধরা ছিল চার লাখ টাকা, আসবাবপত্র খাট, সোফা সেট, ডাইনিং নেট ও ওয়্যারড্রপ বাবদ ধরা ছিল এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১০০ শতাংশ কৃষি জমির মূল্য ধরা ছিল ২১ হাজার ৫০০ টাকা, অকৃষি ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ মূল্য ধরা ছিল ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২০১ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মূল্য ধরা ছিল ৪৪ লাখ টাকা, ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য অগ্রিম প্রদান করা ছিল ৮৫ লাখ টাকা।
স্ত্রীর নামে আট লাখ টাকা মূল্যের ৩০ ভরি স্বর্ণ, তবে স্ত্রীর নামে ছিলনা কোনও গাড়ি ও অকৃষি জমি। অকৃষি ১১৩৯ সহস্রাংশ জমির ক্রয় মূল্য ২১ লাখ ৬৮ হাজার ৭০০ টাকা, ২০১ দশমিক ৫ শতাংশ জমির ক্রয় মূল্য ধরা ছিল ৪৪ লাখ টাকা, জয়পুরহাট শহরে শান্তিনগর এলাকায় একটি বাড়ির মূল্য ধরা ছিল ৪০ লাখ ৩১ হাজার ৩০০ টাকা, ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য প্রদান করা ছিল ৮০ লাখ টাকা।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল রুপালী ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স লিমিটেড, ঢাকা ইপিসি কোম্পানি লি., বাংলাদেশ ইপিসি সার্ভিসেস লি., জয়পুরহাট গ্রিন ব্রিকস লি., এনার্জি অ্যান্ড মাইন লি. (ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, রুপালী ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স লিমিটেডের সিস্টার কনসার্ন)। তবে ছিল না নির্ভরশীলের নামে কোনও অর্থ বা সম্পদ।
তবে এবার জমা করা হলফনামায় নিজের নামে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকার ৫০ ভরি স্বর্ণ আর স্ত্রীর নামে ১১ লাখ টাকার ৪০ ভরি স্বর্ণ দেখানো হয়েছে।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের নিজ নামে ১০০ শতাংশ কৃষি জমির মূল্যে ২১ হাজার ৫০০ টাকা, অকৃষি ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ জমির মূল্য ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ জমির ক্রয়মূল্য ১৬ কোটি ২৬ হাজার ৯৩১ টাকা, ঢাকা পূর্বাচল আবাসিক রাজউক এলাকায় ৭ দশমিক ৫ কাঠা জমির মূল্যে ২১ কোটি টাকা, অর্জনকালীন সময়ে ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য অগ্রিম প্রদান ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। তার স্ত্রীর নামে ৩০.৪০ শতাংশ কৃষি জমির মূল্য সাত লাখ টাকা, অকৃষি ৭৪.৭৫ শতাংশ জমির মূল্য ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৩১ টাকা, ঢাকা সাভার এলাকায় ৫ শতাংশ জমির মূল্য দুই কোটি ২০ লাখ টাকা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠা জমি ক্রয়ের বায়না প্রদান ৭৫ লাখ টাকা, জয়পুরহাট শহরে শান্তিনগর এলাকায় একটি বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ৬২ লাখ টাকা এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য অগ্রিম প্রদান এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।
হুইপ স্বপনের নামে দুটি টিভি, দুটি, ডি়ভিডি, টোস্টার, ওভেন, তিনটি এসির মূল্য পাঁচ লাখ টাকা, আসবাবপত্র খাট, সোফা সেট, ডাইনিং সেট, ওয়ারড্রপের মূল্য পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। তার স্ত্রীর নামে একটি টিভি, দুটি এসির মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র খাট, সোফা সেট, ড্রেসিং সেটের মূল্য ৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।
এ ছাড়া নির্ভরশীলদের নামে পেঁচুলিয়া মৌজায় ৩৭৪ দশমিক ৪০ শতাংশ জমির মূল্য এক কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, জয়পুরহাট মৌজায় ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ জমির মূল্য এক কোটি ৫৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ২০০ ইউকে পাউন্ড, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থ এক কোটি পাঁচ লাখ ৭১১ দশমিক ২৩ টাকা, শেয়ার পাঁচ কোটি ১১ লাখ ৩০০ টাকা, সঞ্চয় পত্র বা স্থায়ী আমানতে পাঁচ লাখ টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে হলফনামায়।
এবারের হলফনামায় তার নামে ঋণ দেখানো হয়েছে ঢাকা নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন ট্রাস্ট ব্যাংক লি. থেকে ৩৮২ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক থেকে ৬৩ দশমিক ৫ কোটি টাকা, উত্তরা ব্যাংক থেকে ২৫ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা, ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন ব্যাংক থেকে ২৭৪ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা, ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে ১০ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা, অ্যালাইস ফাইন্যান্স পিএলসি ব্যাংক থেকে ৬ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা, সবমিলিয়ে ৭৬৪ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।
তার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে রুপালী ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স লিমিটেড, ঢাকা ইপিসি কোম্পানি লি., বাংলাদেশ ইপিসি সার্ভিসেস লি., জয়পুরহাট গ্রিন ব্রিকস লি., এনার্জি অ্যান্ড মাইন লি., ঢাকা ইপিসি ইকুইপমেন্ট লি., ভোলা ক্লিন এনার্জি লি., ফ্রেসিয়া টি অ্যান্ড ট্যুরিজম লি., ইন্টারন্যাশনাল ওয়্যারহাউজ লি., লাকী ফিশারিজ লিমিটেড, অ্যাডভান্স এডুকেয়ার লি., লাকী নারিশমেন্ট লি., গ্রেস এনার্জি লি., এনএমএস হোল্ডিং লি., বু-ইকো লং লাইনার্স লি., কন্টিনেন্টাল এমপ্লয়মেন্ট অ্যাসিসটেন্স লি., হাউজ অব মেজিস্ট্রি লি., প্রিয়ভূমি হোল্ডিং লি. (৩০ নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত হালনাগাদ)।
স্বপন একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক ব্যক্তি। স্ত্রী মেহবুবা আলম গৃহিণী ও বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী শরিফ উদ্দিন মন্ডল ও মা সুফিয়া শরিফ। তাদের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম বালিঘাটা বাংলাদেশের শেষ সীমানা গ্রামে। তবে তিনি ভোটার হয়েছেন তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে জয়পুরহাট-২ আসনের ক্ষেতলাল উপজেলার ভাসিলা পশ্চিম পাড়া গ্রামের ঠিকানায়। তিনি এই আসন থেকে নির্বাচনে একবার হেড়ে গেলেও পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টানা দুইবার জয়পুুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আরও বিস্তারিত আগামী দ্বিতীয় পূর্বে তা তুলেধরে প্রকাশ করা হবে।