ছোট গল্প:
প্রবল ইচ্ছে ছিল এমপির সাথে হ্যান্ডশেক করবার। আমি কমন পিপলদের একজন। সমাজে তেমন পরিচিত নই। আমার অধীনে মাত্র একটি ভোট। তাই কেউ দাম দিতে চায়না। তবে একজন দাম দেয়। তিসি। আমার মতই নিম্নবিত্ত লাইনে হাঁটা একজন পথিক। ওরও একটা ভোট।
তিনি যখন প্রথমবার এমপি হলেন, সেই বছর এক অন্ধকার রাতে বাড়ির রাস্তায় সোলার লাইটের আলো দেখে আমাদের গলির নেতা সরুকে বললাম – লাইট লাগালো কে ভাই? সরু বললেন - এমপি সাহেব লাগাইছেন। ‘ভাই আপনি আমারে এমপি সাহেবের সাথে হ্যান্ডশেক করাইয়া দেন। তারে একটা ধন্যবাদ দিব‘ - আমার কথা শুনে সরু ভাই বললেন আচ্ছা দেব।
বছর খানেক যেতে না যেতেই জানতে পারলাম কী কারণে যেন এমপি সাহেবের সাথে সরুর ডিসকানেকশন হয়ে গেছে। এখন ঐ জায়গাটা তরু দেখে। তরু আমার বয়সে ছোট। তরুকে বলে রাখলাম – ভাই এমপি সাহেবের সাথে হ্যান্ডশেক করার ইচ্ছে। কিছুদিন পর তরুও আমার কথা ভুলে গেল।
যতই দিন গেল আমাদের এলাকার তরুর মত নীচ থেকে উঁচু লেবেলের অনেকেই এমপির আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে গেল। সবাই এমপির সাথে সেলফি তুলে ফেসবুকে দেয়। হাজার হাজার লাইক কমেন্ট পড়ে। সমাজে বাহবা পায়। আমার তো অত চাওয়া নেই, শুধু হ্যান্ডশেক করব। অনেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। তিসি বললো, দাদা, আপনি নিজেই এমপির কাছে যান হ্যান্ডশেক করে ধন্যবাদ দিয়ে আসেন। ‘ আমি কি পারব তিসি?’ আমার প্রশ্ন শুনে তিসি বললো – পারবেন দাদা। চেষ্টা করুন।
আমার তেমন অর্জন নেই। এমপির সাথে হ্যান্ডশেক করাটা আমার জীবনে বড় পাওয়া হবে। স্ত্রী সন্তানদের হাত দেখিয়ে বলতে পারব – এই দেখ, এই হাতে এমপির ছোঁয়া আছে। তখন তারাও পাড়াপড়শীদের গর্ব করে বলতে পারবে।
এমপির সামনে গেলে কী বলব, কিভাবে বলব এ নিয়ে বাড়িতে অনেক রিহার্সেল দিয়েছি। শুধু একটা কথা বলব- অন্ধকার রাস্তায় সোলার লাইট লাগিয়ে দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তারপর তিনি আমার সাথে হ্যান্ডশেক করবেন। আমি হাসি মুখে বিজয়ীর বেশে চলে আসব।
আমাদের এলাকায় এমপি সাহেব এলে আশীর্বাদপুষ্টরা মৌমাছির মত ঘিরে ধরে। এমপি সাহেব চাক আর তার চারপাশ কিলবিল করে মধুলোভী মৌমাছি। হুলধারী মৌমাছিদের ঠেলে মৌচাক পর্যন্ত পৌঁছান সম্ভব হলনা আমার। বারবার ফেইল হয়ে গেলাম। নিরীহ লোকেরা সমাজে অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত, তাই বলে স্বশরীরে হ্যান্ডশেক করে ধন্যবাদ দেয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া মানা যায় কি? সেই দিন তিসি বলেছিল – ভেঙ্গে পড়লে চলবে না দাদা, চেষ্টা করতে হবে।
আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই করে করে ১০ বছর পার হয়ে গেছে। অনেক বাঘা বাঘা মৌমাছি এমপির লাইনে এখন যুক্ত। সকল শ্রেণীপেশার মৌমাছি। হুলওয়ালা। এত শক্তব্যূহ ভেদ করে তার সাথে আর হ্যান্ডশেক করা হয়ত আর হবে না। এমপির লাগানো সেই সোলার লাইটটি নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তাকে ধন্যবাদ দেয়ার ইচ্ছে নষ্ট হয়নি। ইচ্ছে করাটাও কমন পিপলদের একটি শক্তি। সেই হিসেবে নিজেকে এখন আর ছোট মনে হয়না।
#ছোট_গল্প
কবির হোসাইন, সদরপুর, ২৯-১২-২০২৩ইং