উত্তম চরিত্র আনে মানুষের উন্নত জীবন - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, জানুয়ারী ৩১, ২০২৪

উত্তম চরিত্র আনে মানুষের উন্নত জীবন

উত্তম চরিত্র আনে মানুষের উন্নত জীবন
উত্তম চরিত্র আনে মানুষের উন্নত জীবন


হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী:

মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। জীবন-যাপনও অন্যদের থেকে আলাদা। উন্নত। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এই শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। আর শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম রহস্য হলো একটি সুন্দর গুণ। যে গুণটি আছে বলেই মানুষ অন্য প্রাণীদের থেকে শ্রেষ্ঠ। তা হলো খুলুকুন আজিম। গুড ম্যানার। উত্তম চরিত্র। 


আমাদের চরিত্র সুন্দর না হলে তখন আমাদের আর নিকৃষ্ট প্রাণীদের মধ্যে তেমন তফাত থাকে না। এমনকি তখন আমরা আরো নিকৃষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণী হয়ে যাই। আর যখন এই সুন্দর গুণটি আমাদের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যাবে, তখন মানুষের মধ্যেও অন্যতম সফল মানুষ হিসাবে আমাদের জীবন-যাত্রা শান্তিপূর্ণ হবে। এবং পরকালও আরামদায়ক হবে। 


সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয় এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। (সূরা শামস, আয়াত : ৯-১০)। আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরীফের সুরা আলার ১৪ নং আয়াতে বলেন, ‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়।’ এমনিভাবে মহামানব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সেই, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (সহিহ বুখারি : ৩৫৫৯)।


ভালো আচরণের মানুষ সমাজে হয় প্রশংসিত। সবাই তার সুনাম করে। পছন্দ করে। সবার থেকে পায় আলাদা মূল্যায়ন। যে কোন সামাজিক কাজ বা অনুষ্ঠানে মানুষ তাকে অগ্রাধিকার দেয়। দুনিয়ার পাশাপাশি তার পরকালের জীবনও হয় এরকম প্রশংসিত ও আনন্দের। ভালো আচরণের বিনিময় হলো জান্নাত। প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল সা.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে কোন আমলের কারণে মানুষ বেশি জান্নাতে যাবে? তিনি বললেন, আল্লাহভীতি ও সুন্দর আচরণ।’ (জামে তিরমিজি : ২০০৩)।


অন্য হাদিসে এসেছে, জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং কেয়ামত দিবসে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী তারা হবে, যারা তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হবে। আর সবচেয়ে অপছন্দনীয় ও কেয়ামত দিবসে আমার থেকে দূরবর্তী হবে তারা, যারা তোমাদের মধ্যে সারসার (বাচাল), মুতাশাদ্দিক (দাম্ভিক কণ্ঠি) ও মুতাফাইহিক (অহংকারী)।’ (জামে তিরমিজি : ২০১৮)।


জীবন চলার পথে আমাদের আসে অনেক হতাশা। অনেকেই নিজের অবস্থার ওপর আক্ষেপ করেন। ইস্ যদি আমার ওই বিষয়টি থাকতো। যদি আমি অমুক ব্যক্তির মতো হতাম- এরমক আফসোস আর হতাশামুক্ত একটি সুন্দর আরামদায়ক জীবনের জন্য আমাদের প্রয়োজন উত্তম চরিত্র। উত্তম চরিত্র অর্জনকারীর পৃথিবীতে কখনো আক্ষেপ করতে হয় না। সে হয় সবার চেয়ে সফল ও সুখী মানুষ। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের ভেতর যখন চারটি আমল থাকবে তখন তখন দুনিয়ার অন্য কোনো কিছু না পেলেও তোমাদের কোনো আফসোস থাকবে না। সেই চারটি জিনিস হল- ১. আমানতদারিতা ২. সত্যবাদিতা ৩. উত্তম চরিত্র ও ৪. সম্মানজনক রিযিক।


মানুষের প্রতি দয়া, অনুকম্পা, সহানুভূতি ইত্যাদি প্রদর্শনের মাধ্যমে উত্তম চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি কি তোমাদের উত্তম চরিত্র সম্পর্কে কি কিছু বলে দেব না। যে তোমার সঙ্গে সম্পর্কছিন্ন করেছে তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কর, যে তোমার ওপর জুলুম করেছে তাকে তুমি ক্ষমা করে দাও এবং যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে তাকে দান কর। (সুনানে বায়হাকি : ৭৮৫৬)


এভাবে মানুষ তার ভাগ্যকে নিজ নিজ চরিত্রের দ্বারা সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যে পরিণত করতে পারে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বনী আদমের সৌভাগ্য হল উত্তম চরিত্র এবং দুর্ভাগ্য হল মন্দ চরিত্র।’ (সুনানে বায়হাকি : ৭৮০৮)।


আমরা এই প্রশংসিত গুণটি অর্জন করতে চাইলে আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের চরিত্র মাধুর্যে নিজের চরিত্রকে সাজাতে হবে। উত্তম চরিত্রের অত্যন্ত চমৎকার দৃষ্টান্ত স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনিই হলেন আমাদের উত্তম চরিত্রের মাপকাঠি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কলম, আয়াত : ৪)। আল্লাহ তায়ালার এই ঘোষণা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুমহান চরিত্র বিশিষ্ট হওয়ার দলিল বহন করে।


সুতরাং আমাদের চরিত্র হোক হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতো। লেনদেন, আচার-আচরণ সবকিছুই হোক সুন্নাত মতো। তবেই আমরা মানুষের মত মানুষ হতে পারবো। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণীর মর্যাদা ধরে রাখতে পারবো। ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নিজেদের সফল করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যেন আমাদের সকলকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করেন আমীন।


Post Top Ad

Responsive Ads Here