নরেন্দ্র মোদী ‘আদর্শ হিন্দু’ হয়েছেন ঠিকই কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা ‘মুসলমান’ হতে পারছেন না - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

সোমবার, জানুয়ারী ২২, ২০২৪

নরেন্দ্র মোদী ‘আদর্শ হিন্দু’ হয়েছেন ঠিকই কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা ‘মুসলমান’ হতে পারছেন না

 

নরেন্দ্র মোদী ‘আদর্শ হিন্দু’ হয়েছেন ঠিকই কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা ‘মুসলমান’ হতে পারছেন না
নরেন্দ্র মোদী ‘আদর্শ হিন্দু’ হয়েছেন ঠিকই কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা ‘মুসলমান’ হতে পারছেন না

কবির হোসাইন:

ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থলে নবনির্মিত সুবিশাল রামমন্দিরে স্থাপিত রামবিগ্রহে মহাসমারোহে  ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।  


আগামীকাল সোমবার (২২ জানুয়ারি) ১২টা ১৫ মিনিট থেকে ১২টা ৪৫ মিনিটের শুভক্ষণে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। নরেন্দ্র মোদী রামলালার বিগ্রহ কোলে করে নিয়ে নতুন রাম মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করবেন। মার্বেল পাথরের বেদিতে বসানো হবে ৫১ ইঞ্চি উঁচু রামের মূর্তি। বিশ্বাস করা হয় একই সাথে জন্ম হবে আধুনিক হিন্দু-রাষ্ট্র ভারতের যার জনক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর এ উপলক্ষে চলছে মহাযজ্ঞ স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এমন জাঁকজমক আয়োজন আর দেখা যায়নি।


নবনির্মিত রামমন্দিরের প্রাঙ্গণটি ৭০ একর জুড়ে বিস্তৃত, মূল মন্দির রয়েছে ৭.২ একর জায়গা জুড়ে। মনোরম তিন তলা মন্দির গড়া হয়েছে গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে, নীচের দিকে রয়েছে কালো গ্রানাইট পাথর। প্রায় ৭০ হাজার স্কোয়ার ফুট জুড়ে ধবধবে সাদা মার্বেল পাথর পাতা হয়েছে। সাকুল্যে খরচ হয়েছে ১৮০০ কোটি ভারতীয় টাকারও বেশী। 


হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে ভগবান রামচন্দ্রের জন্মস্থান হিসেবে অযোদ্ধা নগরীর নাম উল্লেখ আছে। ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের একজন সেনাপতি মীর বাকি অযোদ্ধাতে ১৫২৯ খ্রীস্টাব্দে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন যার নাম দেয়া হয়েছিল বাবরী মসজিদ। সেখানে শ্রীরাম জন্মেছিলেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করে যদিও এটা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ১৯৯২ সালে ভারতের উগ্রহিন্দু জাতীয়তাবাদী করসেবকেরা বাবরী মসজিদ ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় হামলা-মামলা হয়। প্রায় দুই হাজার মানুষ ভারতজুড়ে দাঙ্গায় মারা যায়। কিন্তু হিন্দুরা বসে থাকেনি। এই একটা ইস্যুতে লালকৃষ্ণ আদভানীর রথযাত্রা, আর এস এস, করসেবক, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত অনেক ধর্মীয় সংগঠন ও বিজেপির মত অনেক রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান ও কর্মপ্রচেষ্টার ফলস্বরূপ বিশাল জনগোষ্ঠীর সমর্থনে ২০১৯ সালে বাবরী মসজিদ ভাঙার রায় পেয়ে যায় নিজেদের পক্ষে। রায়ে বাবরী মসজিদের জায়গা হিন্দুদের দিয়ে দেয়া হয় এবং সেখানে রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। অপরদিকে মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্য একটি জায়গা দেয়া হয়।   


যার জন্য এতকিছু সেটাই যখন হাতের মুঠোয় তাহলে আর দেরী কেন? মাত্র দু’বছরের মধ্যে অযোদ্ধার ভোল পাল্টে গেল। ট্রেন্ডি হয়ে উঠলো অযোদ্ধা। অযোদ্ধাকে অনেকে ভবিষ্যতে সবাই চিনবেন ‘হিন্দু ভ্যাটিকানসিটি’ হিসেবে। পুরানো অযোদ্ধা আস্তে আস্তে বিসৃত হয়ে যাবে। ঐতিহাসিক এই দিনে রামলালার বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবার জন্য শরীর ও মন পরিষ্কার রাখার স্বার্থে এগার দিনের ব্রত পালনের নিয়ম রক্ষা বা উপোস করেছেন।  ‘ব্রত পালনের’ নিয়মে ধ্যানমগ্ন থাকা, কিছু সময় নীরব থাকাসহ মৌনতা পালন করা হয়। তিনি তা করেছেন। কৃচ্ছ্রসাধনের সঙ্গে জপ, পূজাপর্বও সেরেছেন। ‘সাতভিক’ খাওয়ার মাধ্যমে পবিত্র হয়েছেন। এই সাতভিক পেঁয়াজ, রসুন এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্য ছাড়া তৈরি করা হয়।  একটি রাষ্ট্রের নির্বাহীকে এতটা ধার্মিক হয়ে উঠতে দেখা যায়না আজকাল। নবনির্মিত রামমন্দির যতদিন পৃথিবীর বুকে ততদিন হিন্দুরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে নরপতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। কারণ তিনি সকল কিছু হিন্দুয়ানী দৃষ্টিতে দেখেছেন, সবকিছুর মধ্যে হিন্দুত্ব দেখেছেন, আস্তে আস্তে বিশ্বের সকল হিন্দুধর্মাবলম্বীদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। নিজেকে মনেপ্রাণে একজন আদর্শ হিন্দু হিসেবে গড়ে তুলেছেন। হয়ে উঠেছেন বিশ্বের সকল হিন্দুদের একমাত্র জননেতা। 


আজ বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা দারিদ্র্য-পীড়িত। ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর, অবহেলার শিকার। যুদ্ধ বিগ্রহে কাতর। নরেন্দ্র মোদীর মত মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানরাও একত্রিত হয়ে নিপীড়িত মুসলমানদের জন্য হয়ে উঠতে পারতেন আলোকবর্তিকা। একজন নরেন্দ্র মোদী আদর্শ হিন্দু হতে পেরেছেন ঠিকই কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানগণ এখনও মুসলমান হতে পারছেন না।


লেখক কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট  

Post Top Ad

Responsive Ads Here