সালথায় মেলা বন্ধ করা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়িঘর ভাংচুর-লুটপাট |
সালথা(ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথায় মদন হাজীর ওরশের মেলা বন্ধ করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে এক ইউপি সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে ও রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে সংর্ঘষের এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষচলাকালে বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাঝারদিয়ার খলিশপট্টি গ্রামে মদন হাজী বাড়িতে ওরশ উপলক্ষে প্রতিবছর মেলা মেলে। ওই মেলায় হরেক রকমের দোকানদের কাছে লাখ লাখ চাঁদা তুলে ভাগাভাগি করে নেন স্থানীয় দুটি পক্ষের প্রভাবশালীরা। এবারও গত শুক্রবার থেকে ১৩৭ তম তিন দিনব্যাপী ওরশ শুরু হয়। মেলাও মেলে। কিন্তু এই মেলার বিরোধীতা করে আসছিল মাঝারদিয়া গ্রামের সাবেক স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন ও তার লোকজন। আর মেলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে মেলা মেলান একই গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান সাহিদুজ্জামান সাহিদ ও বর্তমান ইউপি সদস্য মো. কবির হোসেন। বিষয়টি নিয়ে ওরশ শুরু পর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
অন্যদিকে মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য, মাদক ও জুয়ার আসর বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে আয়োজক কমিটির বিরুদ্ধে। একপর্যায় মেলায় অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও মাদকের আড্ডার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হলে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে মেলাটি বন্ধ করে দেন উপজেলা প্রশাসন।
এরই জেরধরে শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ইউপি সদস্য বক্কার হোসেন, সিরাজ মোল্যা, সুমন, শাহ আলম, ফায়জুর, মাসুদ গোলদার, জালাল সিকদার ও বিশুসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
মো. ফারুক হোসেন বলেন, সকালে আমার দলীয় লোকজন মাঠে কাজ করতে গেলে তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারধর করে কবির মেম্বারের লোকজন। এ সময় বক্কার মেম্বারকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। তাছাড়া আমার দলীয় লোকজনের পাঁচটি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়।
ইউপি সদস্য কবির হোসেন বলেন, খলিশপট্টি মদন হাজী বাড়ির মেলা ১৩৬ বছরের ঐতিহ্য। এই মেলাটি ভুন্ডল করতে অপচেষ্টা চালায় ফারুক হোসেন ও তার লোকজন। মেলার মধ্যে ঢাল সরকি নিয়ে ডুকে পড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরে প্রশাসনের লোকজন এসে মেলা বন্ধ করে দেন।
রবিবার সকালে আমার দুই ভাই পেঁয়াজ ক্ষেতে কাজ করতে গেলে বক্কার মেম্বারসহ কয়েকশত লোকজন তাদেরকে আটক করে মারধর করে। তারা গুরুতর আহত হলে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মূলত তারা মেলার নেতৃত্ব দিতে না পারায় এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকা শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।