হতদরিদ্র ছালামের হাজার হাজার টিউমারের সাথে ৪৫ বছর ধরে বসবাস - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৯, ২০২৪

হতদরিদ্র ছালামের হাজার হাজার টিউমারের সাথে ৪৫ বছর ধরে বসবাস

   `

হতদরিদ্র ছালামের হাজার হাজার টিউমারের সাথে ৪৫ বছর ধরে বসবাস
হতদরিদ্র ছালামের হাজার হাজার টিউমারের সাথে ৪৫ বছর ধরে বসবাস


দিনরাত ঘুমাতে পারি না  মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটপট করি,চিকিৎসার টাকা নেই,মনে চায় মইর‌্যা যাই'



আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:

‘ডাক্তার দ্যাহাইন্যা টাহা নেই। দিনরাত ঘুমাতে পারি না মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করি। ৪৫টি বছর ধইর‌্যা মুই এই ভাবে বাইচ্ছা আছি। ভিক্ষা কইর‌্যা যা পাই হেইয়া দিয়া বউ পোলা লইয়া সংসার চালাই। এই রহম আর বাঁচতে চাই না মনে চায় মইর‌্যা যাই।’ 


কথাগুলো বলছিলেন সারা শরীরে ৪৫ বছর ধরে বিরল রোগ হাজার হাজার টিউমার নিয়ে বসবাস করা হতদরিদ্র আব্দুস ছালাম। ছালাম বরগুনার তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া গ্রামের মৃত্যু আইনুদ্দিন পহলাদের ছেলে। 


বরগুনার তালতলী উপজেলা পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া গ্রাম। এই গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধের ঢালে সরকারী জমিতে বসবাস করেন হতদরিদ্র মো. আব্দুস ছালাম (৫৫)। বাবা আইনুদ্দিন পহলানের ৩ ছেলের মধ্যে সবার ছোট  ছালাম। জমি জমা বলতে খিছুই ছিল না তাদের। সবাই ছিল দিনমজুর। ছালামের জন্ম ১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাসে। জন্মের ১০ বছরের মাথায় প্রথম তার শরীরে ছোট ছোট গোটার মত উঠতে শুরু করে। দরিদ্র বাবা আইনুদ্দিন পহলান সামন্য আয়ের টাকা দিয়ে ঢাকা বরিশাল খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন যায়গায় ছেলের চিকিৎসা করান। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। ছোট ছোট গোটা ধীরে ধীরে তা বড় হয়ে টিউমারে রুপ নেয়। এতে দিশে হারা হয়ে তার পরিবার। কিন্ত কি করবে দরিদ্র বাবা মা। হতদরিদ্র পরিবারটি এক সময় চিকিৎসা বন্ধ করে দেন তারা।  বাবা মা একই সময় মারা গেলে নিজের আয়ের টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েন ছালাম। তাতেও ভালো না হলে একসময় চিকিৎসা করা ছেরে দিয়ে স্ত্রী নাসিমাকে বিয়ে করে সংসারী হন ছালাম। দেখতে দেখতে কোল জুরে আসে শিউলী, ছালমা, সীমা ও ইব্রাহিম নামে ৪ সন্তান। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তার শরীরের টিউমারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে যন্ত্রনা। দিনমজুরি ছেরে বেছে নেন ভিক্ষা বৃত্তির পথ। এভাবেই চলছে ছালামের জীবন সংগ্রাম। বর্তমানে বাম হাতের কনুইয়ের নীচের টিউমারটি প্রায় ১ কেজি ওজনের হবে। এভাবে হাত পা মাথা চোখ নাক কানসহ শরীর জুরে হাজার হাজার টিউমারে ভরে গেছে ছালামের পুরো শরীর। টিউমারের কারনে ডান চোখটিও নষ্ট হয়ে গেছে এখন সে চোখে আর কিছুই দেখতে পান না। 


সোমবার সকালে ছালামের সাথে কথা হয় আমতলী শহরের চৌরস্তা মোর এলাকায়। তালতলী থেকে ভিক্ষা করতে করতে আমতলী এসেছেন। তিনি জানান তার শরীরের কোন জায়গা বাদ নেই যেখানে টিউমার নেই। টিউমারে ডানােখটি ঢেকে নষ্ট হয়ে গেছে। বাম হাতের বড় টিউমারটির কারনে হাত জাগানো জায়না। দিনে রাতে শরীরে সব সময় অসহ্য যন্ত্রনা হয়। যন্ত্রনার কারনে দিনে রাতে ঘুমাতে পারি না। ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই। কি দিয়ে চিকিৎসা করাবো। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ডাক্তার দ্যাহাইন্যা টাহা নাই। দিনরাত ঘুমাইতে পারি না মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করি। ৪৫টি বছর ধইর‌্যা মুই এই ভাবে বাইচ্ছা আছি। ভিক্ষা কইর‌্যা যা পাই হেইয়া দিয়া বউ পোলা লইয়া সংসার চালাই। কি দিয়া ওষুধ কিন্যা খামু। এই রহম আর বাঁচতে চাই না মনে চায় মইর‌্যা যাই।’ তিনি আকুতি জানিয়ে বলেন, সরকার বা অন্য কেউ যদি মোরে সাহায্য হরত হ্যালে মরার আগে একটু শান্তি পাইয়া মরতে পারতাম।


ছালামের স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, স্বামীর কষ্ট দেইক্যা খুব খারাপ লাগে। টিউমারের ব্যাথায় রাইতে ঘুমাইতে পারে না। ভিক্ষা কইর‌্যা যা পায় হেইয়া দিয়া সংসার চালায়। ওষুধ কিন্যা খাওয়াইন্যা টাহাও নাই। ডাক্তার দেহানের লইগ্যা যদি মোর স্বামীরে কেউ একটু সাহাজ্য করত হ্যালে মোরা হের ডাক্তার দেহাইতে পারতাম।


পচাকোড়ালিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান পাটোয়ারি বলেন, টিউমারের কারনে ছালাম সবসময় অসুস্থ থাকে। চিকিৎসা করানের মতো তার আর্থিক সঙ্গতি নেই। ভিক্ষা করে সংসার চালায় ছালাম। চিকিৎসার জন্য তার সরকারী সহায়তা প্রয়োজন।


পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ছালামের শরীরে ছোট বড় হাজার হাজার টিউমার। জটিল এই রোগ নিয়ে সে কোন কাজ কর্ম করতে পারে না। হতদরিদ্র হওয়ায় চিকিসা করাতে পারছে না। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় তাকে সরকারী সহায়তায় প্রয়োজন। আমি তার চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি।


আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মুনয়েম সাদ বলেন, এটি হচ্ছে নিউরোফাইব্রোমেটোসিস। এ রোগটি থেকে সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে  হবে। 


সালামকে সাহজ্য পাঠানোর জন্য ছালামের স্ত্রী নাসিমা বেগমের মোবাইলে যোগাযোগ করা যাবে। ০১৭৮৮০৫৮৮৭৪( বিকাশ) নম্বরে।



Post Top Ad

Responsive Ads Here