হাজারো মানুষের চোখের জলে চিরনিদ্রায় আধ্যাত্মিক সাধক ‘ডক সাহেব’ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ০৭, ২০২৪

হাজারো মানুষের চোখের জলে চিরনিদ্রায় আধ্যাত্মিক সাধক ‘ডক সাহেব’

হাজারো মানুষের চোখের জলে চিরনিদ্রায় আধ্যাত্মিক সাধক ‘ডক সাহেব’
হাজারো মানুষের চোখের জলে চিরনিদ্রায় আধ্যাত্মিক সাধক ‘ডক সাহেব’


আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:

হাজারো মানুষের ভালোবাসা আর ভক্তদের চোখের জলে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সুফিতন্ত্রের ভাবধারায় বিশ্বাসী ইসলামিক আধ্যাত্মিক সাধক আব্দুল খালেক মুন্সি (ডক্ সাহেব)।


বুধবার বাদ যোহর আলফাডাঙ্গা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন।


এরপর আছরের নামাজ শেষে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ইছাপাশা গ্রামে নিজ বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে নিজের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব স্মৃতি কাদের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।


এরআগে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় বার্ধক্যজনিত কারণে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ইছাপাশা গ্রামে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১২৭ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ভক্তবৃন্দ রেখে গেছেন।


এদিকে তার মৃত্যুর খবরে মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে তাকে শেষবারের মত এক নজর দেখতে ছুটে আসেন হাজার হাজার ভক্ত অনুসারী।


আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ইছাপাশা গ্রামের মরহুম নূরুল হক মুন্সি ও মরহুমা রহিমা বেগমের সন্তান মো. আব্দুল খালেক মুন্সি। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নিজের নাম বদলে রাখেন ‘ডিরেক্টর অব সেন্ট্রাল কিংডম’ যার সংক্ষিপ্ত রুপ হলো এই ‘ডক সাহেব’। কুষ্টিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর তিনি ইন্ডিয়ান কোর্সে পিটিআই সম্পন্ন করেন। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি, উর্দু ও আরবি ভাষায় তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। পারিবারিকভাবেই অবস্থাসম্পন্ন তিনি। যদিও তাকে দেখে মোটেও তা মনে হবেনা কারো। আলোচিত এই মানুষটি দেখতে নিতান্তই অতি সাধারণ। 


গতানুগতিক আধ্যাত্মিক সাধকদের মতো তার বেশভূষা নেই। বরং বলতে হয় পোষাকাদি বা বিলাসী জীবনের বিপরীতেই তার দারুণ মোহ। সাধারণ মানুষের মতোই চলাফেরা করেও যিনি কর্মগুণে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ। চলতি পথে মানুষের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন যা পেয়েছেন তার সবটুকুই। রাস্তাঘাটে আবর্জনা সরিয়েছেন, বাজারের ড্রেন-নর্দমা পরিস্কার করেছেন নিজের হাতে। হাটতে হাটতেই চোখের সামনে থেকে সরে গেছেন দূরে কোথাও। আবার চলার পথে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মানুষের সমস্যা লাঘবে কাজ করেছেন কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই।


চলতি পথে মানুষকে বস্ত্র বিতরণ, অনাহারীর বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া, অসুস্থ্যের সুশ্রষা করা, অসহায়ের পাশে দাড়ানোর মতো অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে মানুষের মুখে মুখে। মানুষের মুখ থেকেই জানা যায়, ডক সাহেব নিজে দরিদ্রদের মাঝে কম দামে লুঙ্গি বিলিয়েছেন, খাবার বিলিয়েছেন। মানুষের বিপদেআপদে তাদের জন্য কাজ করেছেন। তাদের পাশে থেকেছেন। 


১৯৭২ সালে পৌর এলাকার নওয়াপাড়া এলাকায় তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাঁচ বছরের মাথায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে ডক সাহেব আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এমন একজন পরোপকারী জনহিতৈষী মানুষটিকে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অনেক আলোচনা হলেও তিনি লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পড়ে গাঁওগেরামে ঘুড়ে বেড়াতেন অতি সাধারণ হয়ে। 


সূফি ভাবধারায় বিশ্বাসী ‘ডক সাহেব’ গাউসুল আজম বড়পীর হয়রত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর কাদেরিয়া তরিকাপন্থী। প্রায় চার যুগের বেশি সময় ধরে  নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘বিশ্বস্মৃতি কাদের মঞ্জিল’। প্রতি সপ্তাহের বুধবার সেখানে সাপ্তাহিক জলসা এবং প্রতিবছর ২০ ফাল্গুন হতে ২৪ ফাল্গুন পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।


Post Top Ad

Responsive Ads Here