এমপি আনার খুন : একের পর এক বেরিয়ে আসছে রাঘববোয়াল - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

বুধবার, জুন ১২, ২০২৪

এমপি আনার খুন : একের পর এক বেরিয়ে আসছে রাঘববোয়াল

এমপি আনার খুন : একের পর এক বেরিয়ে আসছে রাঘববোয়াল
এমপি আনার খুন : একের পর এক বেরিয়ে আসছে রাঘববোয়াল


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একের পর এক স্থানীয় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পাচ্ছে পুলিশ। গ্যাস বাবুর পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুর নাম এসেছে। 


মঙ্গলবার তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এর আগে গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি ও প্রযুক্তির সহায়তায় নামগুলো সামনে আসছে। এদের বক্তব্য থেকে আনারকে পরিকল্পিতভাবে কলকাতায় নিয়ে হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। এছাড়া এই হত্যা মিশনের নেপথ্যে যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা জড়িত তাও ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।


সূত্র বলছে, আনার হত্যায় গ্রেফতার চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়ার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতার নাম। আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবুর মাধ্যমে ওইসব নেতা শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। আনার হত্যা মিশন শেষ করে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসে গ্যাস বাবুর কাছ থেকে শিমুলের দুই কোটি টাকা বুঝে নেওয়ার কথা ছিল।


সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও বলছে, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহীন। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণ বলছে, শাহীনকে দিয়ে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েক নেতা। এসব কিছুর প্রযুক্তিগত প্রমাণ রয়েছে গ্যাস বাবুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে। বিশেষ করে ভিভো ব্র্যান্ডের একটি ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে খুনিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন গ্যাস বাবু। ওই ফোনেই এমপি আনারকে হত্যার পর ছবি পাঠায় শিমুল। আর গ্যাস বাবু ছিলেন মিন্টুর ডান হাত। এছাড়া হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীনের সঙ্গেও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিন্টুর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।


উল্লেখ্য, কলকাতায় নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে এমপি আনার হত্যার পর থেকেই আলোচনায় আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদকের নাম। তবে আনার হত্যাকাণ্ডের পর ডিবির চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়াসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর হত্যার কারণ হিসাবে ব্যবসায়িক (স্বর্ণ চোরাচালান) দ্বন্দ্বকে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করতে থাকে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমপির স্বজনেরা। তাদের দাবি ছিল, সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেফতার করলে আনার হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। 


আনারের মেয়ে ডরিন একাধিকবার গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ তোলেন, তার বাবার হত্যাকাণ্ডের পেছনের প্রকৃত কারণ উদঘাটন না করে স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। সর্বশেষ সোমবার ডরিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ডিবির এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগও তোলেন। এছাড়া তার বাবার সন্দেহভাজন হত্যাকারীর নামও বলেন তিনি। এর পরদিনই ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে প্রভাবশালী এ নেতাকে আটক করল ডিবি। তার বাড়ি ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডের ভায়না বিশ্বাসপাড়ায়। বাবার নাম মৃত রুহুল কুদ্দুস।


এমপি আনারের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালেও বিরোধী পক্ষ এমপি আনারকে হত্যা চেষ্টা করে। সে ঘটনায় থানায় মামলা হয়, আসামিরাও সব স্বীকার করে। সেই ঘটনার পেছনেও ছিলেন মিন্টু। তবে মামলাটি পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে মীমাংসা হয়।


গত সংসদ নির্বাচনেও আনারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেন মিন্টু। খোকন নামের ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী।


আনারের সঙ্গে বিরোধের কারণ হিসাবে স্বজনদের দাবি, মিন্টু নির্বাচন ছাড়া টানা ১২ বছর ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র ছিলেন। আন্দোলনের মুখে মেয়র পদ হারানো ও পরে আওয়ামী লীগের টিকিট না পাওয়ার পেছনে আনারকে দায়ী করেছিল মিন্টু।


মিন্টুকে আটকের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আনারের বড় ভাই এনামুল হক ইমান বলেন, আমাদের সন্দেহ যা ছিল তাই সত্য হচ্ছে। এ হত্যার পেছনে মিন্টু জড়িত আছে তা আমরা প্রথম থেকেই বলেছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন কোনো প্রভাব খাটিয়েই যেন মিন্টুসহ তার সহযোগীরা পার না পায়। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।


কালীগঞ্জ থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বলেন, অনেক আগে থেকেই মিন্টু এমপি আনারকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। মিন্টুর পথের কাঁটা মনে করতেন আনারকে। সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে আনারের সঙ্গে মিন্টুর বিরোধ তুমুল আকার ধারণ করে।


তিনি আরও বলেন, এমপি আনার হত্যার পর থেকে আমাদের ধারণা মিন্টুই এ হত্যার সঙ্গে জড়িত।