কুষ্টিয়ায় স্বামী ও স্ত্রীর ফাঁদে তরুণী, থানায় মামলা |
মোঃ হাবিবুর রহমান,কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:
মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিয়ে করা এবং প্রতারণামূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে দেনমোহরের টাকা আত্মসাৎ ,মারপিট ও ভীতি প্রদর্শন অপরাধে আব্দুর সবুর (৪৫) ও তার স্ত্রী মোছা. নাসরিন আক্তার লিমার (৪০) বিরুদ্ধে গত ২৬ জুন বুধবার কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী ইশরাত জাহান প্রকৃতি (২৪) ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১ নং আসামী দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব ফিলিপনগর গোয়ালবাড়ি এলাকার আত্তার উদ্দিনের (পেয়ারা) ছেলে আব্দুল সবুর সাদ্দাম (৪৫) ও ২ নং আসামী তার স্ত্রী কুষ্টিয়া সদর থানার হাউজিং স্টেট ডি-৭১ ব্লকের মো. রমজান আলীর কন্যা (এডুকেয়ার স্কুলের শিক্ষিকা) মোছা. নাসরিন আক্তার লিমার (৪০) বিরুদ্ধে কুমারগাড়া মধ্যপাড়ার মৃত রাশেদুল হাসানের কন্যা ইসরাত জাহান প্রকৃতি কুষ্টিয়া মডেল থানায় ধারা - ৪১৯/৪২০/৪০৬/৩২৩/৫০৬ (২) ১৮৬০ পেনাল কোড রুজু হয় ।
মিথ্যা পরিচয় দিয়া বিবাহ করা এবং প্রতারণামূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়া দেনমোহরের টাকা আত্মসাৎ ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অপরাধ। আত্মসাৎ কৃত টাকা পরিমাণ ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মামলা করেন।
এজাহারে ইসরাত জাহান প্রকৃতি উল্লেখ করেন, আমার পিতা ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আমি কুষ্টিয়া গড়াই মহিলা কলেজ হইতে ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করি। আমি আমার মা ও সৎ পিতার সহ কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন সাদ্দাম বাজার (টুরিস্ট পুলিশ ভবনের) সামনে জনৈক মোঃ দেলোয়ার হোসেনের ভাড়া বাসায় বসবাস করি। আমাকে বিবাহ দেওয়ার জন্য আমার মা বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন ও ঘটকের মাধ্যমে ছেলে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার প্রবাসী ভাই মো. সনি বিশ্বাস জানান যে, ২ নং আসামি মোছা. নাসরিন আক্তার লিমা এর কাছে একটি ভালো ছেলের খোঁজ আছে। পরবর্তীতে ২ নং আসামী তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ০১৭৬৪৯৬২৫২৫ হইতে আমার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ০১৯৩১৫৫৫০৩৪ এ কল করিয়া বলে যে, আমার সাথে দেখা করো। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের ১৫ তারিখে বিকাল আনুমানিক চারটার সময় কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন মজমপুর পৌরসভা গেটের সামনে ২ নং আসামির সাথে দেখা হয়। এই সময় ২ নং আসামি আমাকে বলে যে, ঢাকা জেলার উত্তরা পূর্ব থানার বাসা নং -০৯, রোড নং ১৪/বি, সেক্টর নং ০৪, ফ্লাট নং ০৫ /এ নিবাসী মো. মিজানুর রহমানের ছেলে মো. ওয়ালীউল রহমান খান (৩২) নামে একজন ব্যারিস্টার পাশ করেছে এবং সে তার পিতার সাথে যৌথভাবে অটোমোবাইল গাড়ি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসাবে চাকরি করেন। এবং ২ নং আসামি পরিচয় দেন যে সে একজন লেফটেনমেন্ট কর্নেলের স্ত্রী। এরপর ২৪ সালের মে মাসে ১২ তারিখে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক ১৫ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে মো. ওয়ালিউল রহমান খানের সাথে বিবাহ হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি আমার স্বামী ওয়ালিউর রহমান একজন পূর্বে বিবাহিত ছিল। তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে। ১ ও ২ নং আসামি আগে থেকে জানতো আমার স্বামী বিবাহিতা। ২ নং আসামি কোন কর্নেলের স্ত্রী নয়। ছেলে পক্ষের কাছে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তারা এ তথ্য আমার কাছে গোপন করে। পরবর্তীতে আমি এই বিষয়টি ২ নং আসামীকে জানালে সে আমাকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদান করে এবং এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করিলে আমার নামে মিথ্যা মামলা করবে।
পরবর্তীতে আমার স্বামী মোঃ ওয়ালিউর রহমান আমাকে তালাক প্রদান করে। তালাকের পর দেনমোহর বাবদ নগদ ১০ লক্ষ টাকা এবং ৫ লক্ষ টাকা এটি চেক প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১ ও ২ নং আসামী আমাকে মামলার ভয়-ভীতি দেখাইয়া আমার দেনমোহরের গচ্ছিত টাকা হইতে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা নিয়ে নেয়। পরস্পর যোগসাজছে প্রতারণামূলক এবং বিশ্বাস ভঙ্গ করে আমার নিকট থেকে দেনমোহরের সাড়ে সাত লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। তারা ১ ও ২ নং আসামী বাকি আড়াই লক্ষ টাকা দাবি করে বলে যে, এই টাকা প্রশাসনকে দিতে হবে। টাকা না দিলে বিভিন্ন খারাপ প্রস্তাব দেয়। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে ২ নং আসামী আমাকে কিল , ঘুসি মারে এবং এ ঘটনায় থানা পুলিশের নিকট মামলা করিলে আমাকে তুলে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে এবং পরিবারের লোকজনের ক্ষতি করবে মর্মে ভয়ভীতি দেয়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা প্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, আব্দুর সবুর সাদ্দাম ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার লিমার নামে প্রতারণার অভিযোগে ইসরাত জাহান প্রকৃতি নামে একজন ভুক্তভোগী থানায় এজহার দিয়েছে। যার মামলা নম্বর ৩ ০। তারিখ ২৬/৬/২০২৪।ধারা৪১৯/৪২০/৪০৬/৩২৩/৫০৬ (২) পেনাল কোড রুজু হয়েছে।