চাচার বিরুদ্ধে ভাতিজির মামলা |
মামলা তুুলে না আনায় ৪ মাস ধরে একঘরি ভুক্তভোগি পরিবার
দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ৪ মাস ধরে এক অসহায় নারীকে একঘরি করে রেখেছে গ্রাম্য পঞ্চায়েত নামধারী মাতব্বররা। বাড়ির জায়গা নিয়ে চাচা-ভাতিজির বিরোধকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাধর স্কুল শিক্ষক চাচার পক্ষ নিয়ে পঞ্চায়েতের মাতব্বররা ওই পরিবারকে একঘরি করে রেখেছেন।
শুধু তাই নয়, গ্রামের স্বজনদের কারো বাড়িতে যাওয়া আসাসহ পঞ্চায়েতের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে ওই পরিবারকে। কাউকে সামাজিকভাবে বয়কট করার অধিকার গ্রাম পঞ্চায়েত বা গ্রাম্য মাতব্বরদের না থাকলেও প্রাচীন এই পঞ্চায়েতি প্রথায় কৌশলগত ভাবে মানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে ভূক্তভোগী ওই নারীর উপর। যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
প্রতিকার চেয়ে গেল বৃহস্পতিবার দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হোসনা আক্তার নামের ভুক্তভোগী নারী। তিনি উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল বাতেনের মেয়ে ও মটর শ্রমিক আলমগীর হোসেনের স্ত্রী।
জানা যায়, বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল ছাদিরের ছেলে ইমাম হোসেন ও মৃত আবদুল বাতেনের মেয়ে হোসনা আক্তার সম্পর্কে আপন চাচা-ভাতিজি। পিতার ওয়ারিশান সম্পত্তি নিয়ে ওই চাচার সাথে দীর্ঘদিন ধরে ভাতিজির বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে চাচার বিরুদ্ধে ভাতিজির সহকারী জজ আদালত দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জে স্বত্ত্ব মামলা (৮০/২০২৩) দায়ের করেন। যাহা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, চাচা ইমাম হোসেন দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের আবদুল জলিল ও আবদুল আউয়ালসহ লোকদের নিয়ে পিতার ত্যাজ্য বিত্তে সম্পত্তি বিভিন্ন কৌশলে একাই আত্মসাত করে ভোগ করার অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন। উক্ত প্রাপ্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার জন্য তিনি অত্যন্ত ঘৃনিত কৌশল অবলম্বন করে আবদুল জলিল ও আবদুল আউয়ালের কু পরামর্শে পঞ্চায়েতের কাছে কুৎসা ও অপবাদ রটনা করে তাদেরকে একঘরি করে রেখেছেন। গেল ঈদে গ্রামে ২০-২৫টি পশু কুরবানী দেওয়া হলেও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে কুরবানির গোশত পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এছাড়া মহল্লা ও প্রতিবেশিদের ঘরে যাওয়া ওই পরিবারের জন্য নিষেধ করা হয়েছে। প্রতিবেশিদের ঘরে গেলে চাচা ইমাম হোসেনসহ তাদের হেনস্থা করেন এবং তাদের সাথে কথা না বলার জন্য সকলকে বারন করেন। লিখিত অভিযোগে ভাতিজি উল্লেখ করেন আদালত থেকে মামলা তুলে না আনলে খুন করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দিয়েছেন চাচা ইমাম হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষক ইমাম হোসেন বলেন, যে জায়গা নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে এটি তার ক্রয়কৃত জমি। কিছুদিন আগে হঠাৎ মামলা সংক্রান্ত নোটিশ পাওয়ার পর তিনি পঞ্চায়েতকে বিষয়টি অবগত করেছেন। পঞ্চায়েত শালিস বৈঠকের ব্যবস্থা করতে চাইলে মহিলাটি তাদের কথা শুনেনাই বরং তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। এর পর থেকে তার সাথে কেউ কথাবার্তা বলিনা। একঘরি করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এটি পঞ্চায়েতের বিষয় তারাই ভাল বলতে পারবেন।
একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলতাব হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
ইউপি সদস্য ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন একঘরি বা সমাজচ্যুত করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পাড়া প্রতিবেশিদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি হোসনা আক্তার নামের এই মহিলাটি অসাধু আরচণ ও অশালীন কথাবার্তা বলে। এ কারণে আমরা গ্রামবাসীকে বলেছি তার সাথে কথাবার্তা বলার দরকার নেই। তার থেকে দুরেই থাকো, তাকে তার মত চলতে দাও।
হোসনা আক্তারের পার্শবর্তী ঘরের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, তার পরিবারের সাথে হোসনার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে শুক্রবার তাকে মসজিদ কমিটি ও ইউপি সদস্য সমন্বয়ে ডেকে নিয়ে হোসনার সাথে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে। এর কারণ হিসাবে হোসনাকে একঘরি করা হয়েছে মর্মে তাকে অবগত করা হয়।
লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তিতার কথা স্বীকার করে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু বলেন, তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।