লক্ষ্মীপুরে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ |
সোহেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
যোগদানের পর থেকেই তিনি অনিয়মের মাধ্যমে দপ্তরের বিভিন্ন মেরামত ও নির্মাণকাজ করা, ওটিএম করে নিজের পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ প্রদান, কাজের প্রাক্কলিক মূল্য আগেই পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধিকাংশ ওটিএম দরপত্র তার পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে আসছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে অনেক নামকরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করার সক্ষমতা থাকা সত্বেও কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এছাড়া প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিন দিন অফিস করেন। দুপুর ১২টার দিকে এসে আড়াইটার দিকে অফিস ত্যাগ করেন। এ সময়ে তার পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া অন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে তিনি ঠিকমতো কথাও বলেন না। বিএনপি-জামায়েত পরিবারের সন্তান মো. আকতার হোসেন নিজেও বিএনপি-জামায়েতের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম বহিভূতভাবে ঠিকাদারদের চাপদিয়ে তার সরকারি বাংলোয়কে হোয়াইট হাউজ বানিয়ে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর গণপূর্ত বিভাগের কোয়াটার ভবনের বাউন্ডারি ওয়াল সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম করে তার পছন্দের ঠিকাদার চাঁদপুরের বেলাল হোসেন। এই নিয়ে সাংবাদিকরা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে চাইলে, তিনি সাংবাদিকদের সাথে অসদাচরণ করেন। পরে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রচার করলে চাঁদপুর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আজগর হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করেন দুদক। অভিযানের খবর পেয়ে প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন ওই দিন দপ্তরে অনুপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন ঠিকাদার জানান, প্রতি বছর প্রায় ৩-৪ কোটি টাকার এপিপি (মেরামতের) কাজ আসে। এ কাজগুলো নির্বাহী প্রকৌশলী তার নিজস্ব কিছু ঠিকাদারের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বণ্টন করেন। অনেক তালিকাভুক্ত ঠিকাদার এসব কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি তিনি বেনামি ভাউচার করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন। দপ্তরের বিভিন্ন মেরামত ও নির্মাণকাজ ওটিএম করে তার পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। তিনি কাজের প্রাক্কলিক মূল্যের আগেই পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেন। অবৈধ সুবিধা নিয়ে কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদারকে নিয়মিত কাজ পাইয়ে দেন এ প্রকৌশলী। অন্য ঠিকাদাররা প্রতিবাদ জানালে অফিসের ভেতর তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। কাজ না দেওয়ার হুমকি দেন। আর এভাবে তিনি সরকারি অর্থ লোপাট করছেন। এছাড়া বিভিন্ন দরপত্র গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট এবং জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ না করে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। নিয়মের বাইরে গিয়ে রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফ কিউ) করে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এইসব বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন বলেন, অভিযোগ হতেই পারে। চলতে গেলে সবাইকে তো খুশি করতে পারি না। এখানে তো অনেক ঠিকাদার আছে, কার মনে কি আছে, সেটা তো বলতে পারবো না। যারা কাজ পায়না তারাই অভিযোগ করে।