সুবন্ধির বাঁধ কৃষকের মরণ ফাঁদ, কাটার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল |
আমতলী (বরগুনা ) প্রতিনিধি:
মঙ্গলবার সকালে আমতলী উপজেলায় চাওড়া নদীর উপর নির্মিত সুবন্ধি বাঁধ কেটে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কৃষকরা। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব বাঁধের বর্তমান অবস্থা পরিদর্শনে গেলে শত শত কৃষকরা এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
স্থানীয়রা জানান, আমতলী উপজেলার চাওড়া নদীটি হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর ও কুকুয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দিয়ে প্রবাহিত। চার ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধীক মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এ নদী। এ নদী দিয়ে ব্যবসায়ীরা নৌপথে আমতলী, তালুকদার বাজার, অফিস বাজারসহ বিভিন্ন হাটে আসা যাওয়া করতো। ১৯৬৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটির উত্তর শাখা অংশের সুবন্ধি এলাকায় একটি এবং ১৯৮১ সালে আমতলী অংশে আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করে। এক পর্যায়ে চাওড়া নদীতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে এলাকাবাসীর দাবির মুখে ১৯৮৬ সনে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদার সুবন্ধী বাঁধটি কেটে দেয়। এরপর প্রায় ২২ বছর স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন কাজে নদীর পানি ব্যবহার করছে। পণ্য পরিবহনের কাজও হয়। কিন্তু ২০০৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড আবার সুবন্ধি এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে। এতে নদী ও শাখা খালের ৭১ কিলোমিটার জুড়ে পানি প্রবাহ সম্প‚র্ণ বন্ধ হয়ে কচুরিপানায় ভরে গেছে। নদীর পানি পচে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বাঁধের কারনে চার ইউনিয়নের কৃষকদের জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। একটি গবেষনায় দেখা গেছে এই বাধের কারনে বছরে কৃষকের প্রায় ২শ কোটি টাকা ক্ষতি হয় ।
গুবন্ধি নদীটি রামনা বাধ চ্যানেলের সাথে যুক্ত। এ বাধ কেটে দিলে ৭১ কিলোমিটার নদী ও শাখা খালে পানি প্রবাহ বাড়লে রামনাবাধ চ্যানেলে নাব্যতা ফিরে পাবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স¦প্নের পায়রা সমুদ্র বন্দরে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পাবে।
ভুক্তভোগী সেলিম সিকদার বলেন, গত আট দিন ধরে জমির বীজ ভিজিয়ে রেখেছি কিন্তু পানির কারনে জমি চাষাবাদ করতে পারছি না। বীজ ঘরে বসে পচে যাচ্ছে। অন্তত লক্ষাধিক মানুষকে বিপদে ফেলে মাত্র ৫০টি পরিবারের স্বার্থ রক্ষায় নির্মাণ করা হয়েছে এ বাধ। দ্রæত এ বাঁধ কেটে দেয়ার দাবী জানান তিনি।
ভুক্তভোগী চাওড়া ইউপি সদস্য জসিম গাজী বলেন, এ বাঁধের কারনে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এ বাঁধের কারনে চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ অর্থনৈতিক ও শারীরিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রæত এ বাধ কেটে দেয়ার দাবী জানান তিনি।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, বাঁধের কারনে চার ইউনিয়নের ৯৯ ভাগ মানুষের ক্ষতি হয় এটা যেমন চরম সত্য আবার বাঁধ কেটে দিলে মাত্র ৫০টি পরিবাবের সমস্যা হয় ।
চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ও বরগুনা জেলা বার সহ-সভাপতি অ্যাড. মোঃ মহসিন হাওলাদার বলেন, লক্ষাধিক মানুষকে রক্ষা করতে হলে সুবন্ধি বাঁধ কাটার বিকল্প নেই। এই বাঁধের কারনে চার ইউনিয়নের মানুষ অর্থনৈকিভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাঁধ কাটলে যে কয় পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই পরিবারগুলো রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে আর সমস্যা থাকে না।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বাঁধ কাটার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি তিনি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিবেন।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব বলেন, সুবন্ধি এলাকা পরিদর্শণ করেছি। ওই সময়ে বেশ কিছু মানুষ বাঁধ কাটার পক্ষে বিক্ষোভ করেছে। তবে অধিদপ্তরের কারিগড়ি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা -০১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু জানান, জনগণের দাবীর মুখে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বাধের বর্তমান অবস্থা এবং কৃষকের সমস্যা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
৪ নভেম্বর,২০০৯ দৈনিক ইত্তেফাকে ও দৈনিক ভোরের পাতা সুবন্ধি সমস্যা তুলে ধরলে স্থানীয় মানুষ বাধ কাটার দাবীতে লাগাতার আন্দোলন করে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কার্যত কৃষককের কোন লাভ হয়নি।