নিজস্ব সংবাদদাতা
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে আবারও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে একজন সংবাদকর্মীকে। একজন সাপে কাটা রোগীর বিষয়ে তথ্য নিতে যেয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে তার সাথে চরম দুর্ব্যবহারের পর একজন আনসারের বাধাদানের পরে আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তার কক্ষে দীর্ঘক্ষণ বেআইনিভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ যেয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে সাংবাদিকদের কর্তব্যকাজে বাধা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অপমানজনক ব্যবহারের অভিযোগে ৭২ ঘন্টার মধ্যে হুমায়ুন কবির ও জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এব্যাপারে রোববার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। সাংবাদিকগণ অভিযোগ করেন, ২০২০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রের অপব্যাখ্যা করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল এলাকাতে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের উপরেই অযাচিত বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছেন। সাংবাদিকদের সংবাদ সংক্রান্ত কোন তথ্য তারা দেনই না বরং কেউ জরুরি কোন সংবাদ সংগ্রহে গেলে তাদের হেনস্তা হতে হয়। এর ফলে বিএসএমএমসি হাসপাতালে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছেন হাসপাতালের পরিচালক। তারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
জানা গেছে, গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ফরিদপুর প্রতিনিধির ক্যামেরাপার্সন নয়ন শেখ বিএসএমএমসি হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দোতলায় অবিস্থত পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে সাপে কাটা একজন রোগীর তথ্য সংগ্রহ ও ফুটেজ নেয়ার সময় কর্মরত আনসার সদস্য সুব্রত দাস তাকে বাধা দেন এবং তার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় নয়ন ওই রোগীর ফুটেজ নিলে কি সমস্যা জানতে চাইলে তার সাথে চরম দু্র্ব্যবহার করে একপর্যায়ে তাকে ওই ভবনের নিচ তলায় আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আসাদুল্লাহ সুমনের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। ওই সময় থেকে বিকেলে সাড়ে ৩টা পযন্ত ওই ফটো সাংবাদিক সেখানে অবরুদ্ধ ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ ওই ফটো সাংবাদিককে উদ্ধার করে।
দুপুর ২টা ৫০ দিকে এই প্রতিবেদক ওই হাসপাতালের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরকে ফোন দিয়ে কেন নয়নকে আটকে রাখা হয়েছে তা জানতে চান। উত্তরে পরিচালক জানান, হাসপাতালের ভেতরে যে কোন ছবি নিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি প্রয়োজন হয়, তিনি সেই অনুমতি নেয়নি। সংরক্ষিত এলাকা ছাড়া ছবি নিতে অনুমতি প্রয়োজন হয় কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নিষেধ আছে। পরিচালক তখন সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে খবর পেয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহরিয়ার হাসপাতালে গিয়ে শেখ নয়নকে উদ্ধার করেন।
ফটো সাংবাদিক শেখ নয়ন জানান, চরভদ্রাসন উপজেলায় রাসেল ভাইপার সাপে কাটা একজন রোগীর ছবি ও তথ্য সংগ্রহের হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দোতালায় সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়েছিলেন তিনি । সেখানে ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহের সময় তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন আনসার সদস্যরা। পারে তাকে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহাসান তালুকদারকেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম পিকুল, সহ-সভাপতি সঞ্জীব দাস, সাপ্তাহিক গণমনের নির্বাহী সম্পাদক তমিজউদদীন তাজ, দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক পান্না বালা, দৈনিক কালের কন্ঠের সাংবাদিক নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, বাংলাদেশ বেতারের সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম মনির, সাংবাদিক নাজিম বাকাউল, সাংবাদিক সেলিম মোল্লা, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য এসএম মাসুদুর রহমান তরুণ, সিরাজুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, গতকাল শনিবার সন্ধায় প্রেসক্লাবে বিষয়টি নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাসপাতালে আজ সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তসহ বিচার এবং হাসপাতাল পরিচালকের বেপরোয়া আচরণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এসময় সাংবাদিকদের কর্তব্যকাজে বাধা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অপমানজনক ব্যবহারের অভিযোগে ৭২ ঘন্টার মধ্যে বিএসএমএমসি হাসপাতালের পরিচালক হুমায়ুন কবির ও জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এব্যাপারে রোববার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। সভা থেকে অবিলম্বে ওই হাসপাতালের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরকে প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ৪ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখার যুগ্নসচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মুখপাত্র হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ও অধিদপ্তরের প্রতিনিধিত্ব করা, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ব্রিফিং ও সাক্ষাৎকার প্রদানের বিষয়ে মহাপরিচালকের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন হবে এবং অংশগ্রহণকারীকে নূন্যতম পরিচালক পদমর্যাদার হতে হবে।
উল্লেখিত এই আদেশের সূত্র ধরে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা সাংবাদিকদের কোন তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকেন। হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান এই বিধিনিষেধের আওতায় আদৌ পড়েনা। করোনাকালীন সময়ে উদ্ভুত ওই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফরিদপুর মেডিক্যাল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কি তথ্য গোপন করতে চান এটিই সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা।
এদিকে ফরিদপুরের বিশিষ্ট জনেরা বলছেন, পরিচালকসহ অন্যরা হাসপাতালের বিভিন্ন দুর্নীতি লুকোচুরি করার ক্ষেত্রে হয়তো বা সাংবাদিকদের প্রবেশের ব্যাপারে করাকরি আরোপ করেছেন।