ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে দোকান করছেন বাবা-ছেলে - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে দোকান করছেন বাবা-ছেলে

 

ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে দোকান করছেন বাবা-ছেলে
ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে দোকান করছেন বাবা-ছেলে

জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:

খরিদদার দোকানে আসছেন, স্বাভাবিক নিয়মে চা-নাস্তা খেয়ে চলে যাচ্ছেন। বিক্রেতাও স্বাচ্ছন্দ্যে সব কিছু পরিবেশন করছেন। দেখে বুঝার উপায় নেই দোকানি ও তার ছেলে কানে শুনতে পাননা আর মুখে কথা বলতেও পারেন না। ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচা-কেনা করছেন তারা। তাদের এমন প্রতিভায় বিস্মিত সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিত্তবানরা পাশে থাকলে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয়দের।


ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের ফকদনপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. হাবিব। জন্মগত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী তিনি। পৌরশহরের রোড সুগারমিল গেটের বিপরীতে বাবার মুদি দোকান। ছোটবেলা থেকে থাকতেন মুদি দোকানে। বাবা মারা যাওয়ার পরে নিজে শুরু করেন দোকান। বিয়ের পরে এক ছেলে ও মেয়ের বাবা হয়েছেন। মেয়ে কানে শুনতে পেলেও কথা বলতে পারেন না। আর ছেলেও কানে শুনতে পান না আর মুখে কথা বলতে পারেন না।


সকালে বাড়ির কাজ শেষ করে ছেলেকে সাথে নিয়ে দোকানে আসেন তিনি। বাবা-ছেলের যোগসাজশে চলে বেচা-কেনা। দোকানের প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে নিয়ে আসেন ছেলে। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আবার কথাও বলেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। দোকান থেকে কেউ বাকী নিলে সেটিও লিখে রাখেন বাবা-ছেলে।


আরেক ক্রেতা রফিকুল বলেন, তারা বাবা ছেলে ব্যবহার অনেক ভালো। কারো কথায় বিরক্ত হয় না বা রাগ করে না। আমরা এখানে ওদের সাথে একটু মজা করার জন্যই চা খেতে আসি। তারা দুজনে এমন অক্ষম হওয়ার পরেও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এখন সকলে যদি তাদের একটু সহযোগীতা করে তাহলে তার দুই সন্তানের পড়াশোনা ভালো ভাবে হবে।


দোকানের ক্রেতা সহিদুল বলেন, ইশারায় ক্রেতাদের ভাষা বুঝে ফেলেন বাবা-ছেলে। লাল চা, দুধ চা নাকি পান সবই বুঝেন ইশারায়। তাদের মত অনেক প্রতিবন্ধী অন্যের কাছে হাত পেতে চললেও তারা হয়ে উঠেছে অনন্য উদাহরণ।


হাবিব এর প্রতিবেশি মনোয়ারা বলেন, তাদের পরিবারে অনেক অভাব। একটা ছোট্ট দোকান করে চলতে হয় তাদের। ছেলে, মেয়ে, বাবা তিনজনেই প্রতিবন্ধী। মেয়েটা ছোট চিকিৎসা করলে হয়তো ভালো হবে। সরকার যদি পরিবারটার পাশে দাড়ায় তাহলে পরিবারটা ভালোভাবে চলতে পারে।


হাবিবের স্ত্রী আফরোজা আক্তার বলেন, ১১ বছর আগে হাবিবের সাথে বিয়ে হয় আমার। স্বামীর মতই দুই সন্তানও কথা বলতে পারেন না। ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে তাদের সাথে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। স্বামী ও ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা হলেও মেয়ের হয় নি এখনো। মেয়েটা বড় হলে বিয়ে দিতে হবে। তাই চিকিৎসা করাতে চাচ্ছি যদি কিছুটা হলেও ভালো হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকার ও বিত্তবানরা আমাদের পাশে দাড়ালে বাচ্চাটার চিকিৎসা করা পারতাম। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সারোয়ার মুর্শিদ আহমেদ বলেন, হাবিব এর পরিবারকে ক্ষুদ্র ঋণ সহয়তা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া তার মেয়ের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। পরিবারটির পাশে থাকবে সমাজসেবা।


Post Top Ad

Responsive Ads Here