বান্দার আমলই তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

সোমবার, অক্টোবর ০৭, ২০২৪

বান্দার আমলই তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ

বান্দার আমলই তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ
বান্দার আমলই তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ


হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী:

প্রিয় পাঠক বৃন্দ! আজ আমি হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী,আপনাদের সামনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তা এমন একটি বিষয়, যা আমাদের সবারই জানা প্রয়োজন বিষয়টি হলো বান্দার আমলই তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ হতে পারে এমন কিছু আমল আজ আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরবো। 


নিজ আমলের গুণে মানুষ যেমন জান্নাতি হতে পারেন, তেমনি কর্মদোষে হতে পারেন জাহান্নামি। আর জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাই একজন ঈমানদারের বড় সাফল্য। অর্থাৎ মৃত্যুর পরই নির্ধারিত হবে, কে সফল আর কে ব্যর্থ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়। (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫)। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত দুনিয়ার মরীচিকার পেছনে জীবনকে ধ্বংস না করে আল্লাহর নির্দেশ পালন করা। নামাজ-রোজা-হজ যাকাত যথাযথ সম্পন্ন করা এবং যেসব আমলের মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, সেই আমলগুলোতে আত্মনিয়োগ করা।


জান্নাত-জাহান্নামে যাওয়ার প্রধান দুই কারণ : আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে নেবে এমন কিছু সম্পর্কে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ভয় ও সুন্দর চরিত্র। অতঃপর মানুষকে যা জাহান্নামে বেশি নেবে এমন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)। জাহান্নাম থেকে বাঁচায়, এমন কিছু আমল নিচে তুলে ধরা হলো :


ঈমান বাঁচায় জাহান্নাম থেকে : ঈমান সবচেয়ে বড় সম্পদ। যে এই সম্পদ অর্জন করতে পারেনি, সে কিছুই পায়নি। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলতেন, কেয়ামতের দিন অবিশ্বাসীকে হাজির করা হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে তোমার যদি দুনিয়া ভর্তি সোনা থাকত তাহলে তুমি কি বিনিময়ে তা আজাব থেকে বাঁচতে চাইতে না? সে বলবে, হ্যাঁ। এরপর তাকে বলা হবে তোমার কাছে তো এর চেয়ে বহু ক্ষুদ্র বস্তু (আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে মেনে নেওয়া) চাওয়া হয়েছিল। (বুখারি : ৬৫৩৮)।


অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকি থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।’ (বুখারি : ৪৪)।


দান-সদকা ও সদ্ব্যবহার জাহান্নামের প্রতিবন্ধক : আদি ইবনে হাতিম (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বলেন, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। এরপর তিনি পিঠ ফেরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। এমনকি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বলেন, তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করো)। (বুখারি : ৬৫৪০)।


আল্লাহর পথে রোজা রাখা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিন রোজা রাখে, আল্লাহ তার বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তার মুখম-লকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখেন। (ইবনে মাজাহ: ১৭১৮)। পরিবারকে সুশিক্ষা দেওয়া। আলী (রা.) আল্লাহর বাণী- ‘তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (সুরা তাহরিম : ৬) এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজনকে কল্যাণকর বিষয় শিক্ষা দান করো।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব : ১১৯)। এর কারণ হলো, পরিবার যখন সুশিক্ষা পাবে, তখন তারা আল্লাহর আনুগত্য করবে, এবং তার পূর্বপুরুষদের জন্য দোয়া করবে, এতে করে তারা নিজেরাও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পারবে, তেমনি তাদের দোয়া ও নেক আমলের সুফল তাদের সুশিক্ষাদাতা পরিবারকর্তাও পাবে।


এক আল্লাহর ইবাদতে মনোযোগী। আবু আইয়ুব (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন, যে আমল আমাকে জান্নাতের কাছে পৌঁছে দেবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রাসুল (সা.) বলেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। সে ব্যক্তি চলে গেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাকে যে আমলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দৃঢ়তার সাথে পালন করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম : ১৪)।

আরাফার দিনে সাধারণ ক্ষমা : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাগণের কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কী চায়? (অর্থাৎ যা চায় আমি তাদেরকে তা-ই দেব)। (মেশকাত: ২৫৯৪)। ইতেকাফ : প্রিয়নবী (সা.) ঘোষণা দেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরিখা পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করবেন; যার দূরত্ব দুই দিগন্তের দূরত্বের থেকে বেশি দূরত্ব হবে।’ (কানজুল উম্মাল : ২৪০১৯)। জোহরের সুন্নত আদায় : উম্মু হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।’ (তাবরানি আউসাত : ৭৫৪৭)। উম্মু হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সালাত পড়লো, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (আবু দাউদ, তিরিমিজি, ইবনে মাজাহ ইকামাতিস সালাহ: ১১৬০)।


আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন বান্দার দু’চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদি তা মাছির মাথার পরিমাণও হয় এবং তা চেহারা বেয়ে পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুজ জুহুদ : ৪১৯৭)। সহজ-সরল নম্র-ভদ্র : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সহজ-সরল, নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (মুসতাদরাক হাকিম : ৪৩৫)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী। (তিরমিজি : ২৪৮৮)।


আল্লাহর পথে কষ্ট করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর পথে যে বান্দার দু’পা ধুলায় মলিন হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এমন হতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি : ৪/২৮১১)। ইখলাসের সঙ্গে টানা ৪০ দিন জামাতে নামাজ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে ৪০ দিন তাকবিরে উলার (ইমামের প্রথম তাকবির) সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে, তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ১. জাহান্নাম থেকে মুক্তি ২. মুনাফেকি থেকে মুক্তি।’ (তিরমিজি: ২৪১)।


অসুস্থতার সময় বিশেষ কালেমা পাঠকারী : হজরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি তার অসুস্থতার সময় (নিচের) কালিমাগুলো পাঠ করবে, তার জন্য জাহান্নাম হারাম।লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল মালিকুল হাক্কু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ। লা ইলাহা ইল্লল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা হাউলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। (মুসনাদে আবি ইয়ালা : ৬১৫৩)। যার চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি নির্গত হয় : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন - যে মুমিন বান্দার দুচোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদি তা মাছির মাথার পরিমাণও হয়, এবং তা চেহারা বেয়ে পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুজ জুহুদ : ৪১৯৭)।


অতএব প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে হলে জাহান্নাম থেকে বাঁচার উল্লেখিত আমলগুলোর ব্যাপারে মুমিন মুসলমানের বেশি সচেতন ও যতœশীল হওয়া উচিত। তাই হাদিসে বিভিন্ন আমলের পুরস্কারস্বরূপ জাহান্নাম থেকে মুক্তি, জাহান্নাম থেকে দূরে রাখার ঘোষণা কিংবা কোনো আমলকে জাহান্নামের ঢালস্বরূপ বলা হলেও উপরোক্ত বর্ণনায় সরাসরি জাহান্নাম হারাম ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী (সা.)। তাই এ ব্যাপারে মুমিন মুসলমানের বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Post Top Ad

Responsive Ads Here