সালথায় লাউ চাষে শিক্ষার্থী আল আমিনের সাফল্য |
শরিফুল হাসান,সালথা(ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুর জেলার মধ্যে সালথা উপজেলা একটি ব্যতিক্রম কৃষি নির্ভর এলাকা। সবসময় দুহাত ভরে কৃষিতে অবদান রাখে এই উপজেলা। পাট ও পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত হিসেবেও পরিচিত সালথা উপজেলা। এখানে মৌসুমে প্রায় ৯০ ভাগ জমিতে পাট ও পেঁয়াজের চাষ হয়।
তবে সব কিছু ছাড়িয়ে লাউ ও সবজি চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছে শিক্ষার্থী মো. আল আমিন শেখ। গত কয়েক বছর যাবৎ লাউ, ধুন্দল, চন্দনি, পুইশাক ও অন্যান্য সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আল আমিন। বিভিন্ন সবজি চাষ করলেও লাউ চাষে সাফল্য ধরা দেয় এ বছর তার। লাউ চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন শিক্ষার্থী আল আমিন।
মো. আল আমীন শেখ (২৩) উপজেলার যদুনন্দী ইউপির জগন্নাথদী গ্রামের দক্ষিণপাড়ার লিটু শেখের ছেলে। তারা ২ ভাই ৩ বোন। সে সবার বড়। আল আমিন নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষাবাদ করছেন। বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই তাকে চাষাবাদে সাহায্য করেন। চাষাবাদের কারণে আল আমিনের লেখাপড়ায় কোন সমস্যা হয় না। সবজি চাষে তিনি নিজেকে একদম পারফেক্ট মনে করেন। দেশ ও কৃষির প্রতি টান থেকেই আল আমিনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
সালথায় লাউ চাষে শিক্ষার্থী আল আমিনের সাফল্য |
বুধবার (২৩ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে আল আমিন প্রায় এক একর জমিতে লাউ চাষ করেন। সেখানে দুটি মাচা করছেন। কাদা বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে বেড পদ্ধতিতে কয়েক প্রজাতির হাইব্রিড জাতের লাউ গাছ রোপণ করা হয়েছে। মোট ১৩টি বেড রয়েছে, একটি চারা থেকে অন্যটির দূরত্ব প্রায় আড়াই ফুট। শতক প্রতি মাত্র ৫০০-৭০০ টাকা খরচ হয়েছে। ৪০-৪৫ দিন পর থেকে প্রায় প্রতিদিন লাউ সংগ্রহ করা যায়। লাউগাছ ৪ মাস পর্যন্ত ভালো ফলন দেয়। এর পরই ফলন কমতে থাকে। এই জন্য ৪ মাস পর নতুন করে লাউ গাছ রোপণ বা অন্য কোন ফসলের চাষ করত হয়। লাউ সারা বছর চাষ করা যায়। তাই লাউ চাষকেই বেছে নিয়েছেন আল আমিন। সব খরচ বাদ দিয়ে আল আমিন এ বছর প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা লাউ চাষে লাভ করবেন বলে ধারণা করছেন।
লাউয়ের বাগানেই কথা হয় আল আমিনের সঙ্গে। আল আমিন জানান, আমি ঢাকায় ছোট্ট একটা চাকরি করতাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাড়িতে এসে চিকিৎসা নিতে থাকি। পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ ও পরিবারের খরচ মেটাতে নিজেই চাষাবাদ শুরু করি। সবাই যেখানে পাট-পেঁয়াজ করে আমি সেখানে ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা করি। আমার এক বড় ভাই আমাকে সেভাবেই পরিকল্পনা দেন। তারই পরিকল্পনায় আমি গতবছর পরীক্ষামূলক লাউ চাষ করি। সেখানে আমি কিছুটা সাফল্য পেয়ে এবছর প্রায় ১ একর জমিতে লাউ চাষ করি। সব খরচ বাদ দিয়ে এবছর লাউ চাষে আমি প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা আয় করতে পারব বলে আশা করছি।
সালথায় লাউ চাষে শিক্ষার্থী আল আমিনের সাফল্য |
আল আমিন আরও জানান, আমি দেশকে ভালোবাসি এই মাটিকে ভালোবাসি। তাই কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমার মূলধন কম। তাছাড়া আমার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই আমি আমার দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে প্রায় ৫ একর জমি লিজ নিয়ে একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সেখানে ভার্মি কম্পোস্ট, জৈব সার তৈরি করা হবে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করতে পারব। লাউ, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, পেঁপে, কয়েক প্রকার কলাসহ বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করবো। এখানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক একদম ব্যবহার হবে না বললেই চলে। সব কিছু হবে অর্গানিক। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই এবং সবাইকে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিই।
সালথায় লাউ চাষে শিক্ষার্থী আল আমিনের সাফল্য |
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার বলেন, উপসহকারী কৃষি অফিসারের কাছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আল আমিনের গল্প শুনেছি। তারা নিয়মিত আল আমিনের লাউ ক্ষেত পরিদর্শন করছে। তিনি বাজারের কয়েকটি হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করেছেন, জৈব সার ও সকল প্রকার সারের সঠিক ব্যবহার করেছেন। তার বৃহৎ কৃষি প্রকল্পের গল্প শুনে ভালো লাগছে। আমি নিজে দু-একদিনের মধ্যে তার লাউ ক্ষেত দেখতে যাব। তাকে যেকোন সেবা ও পরামর্শ দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। দেশে এই রকম তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেই কৃষিতে নতুনত্ব আসবে।