জমাদিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, নভেম্বর ০৩, ২০২৪

জমাদিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

জমাদিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত
জমাদিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত


হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী:

আরবের শীতকাল জমাদিউল আউয়াল। আরবি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের পঞ্চম মাস হলো ‘জমাদিউল আউয়াল’। এর জোড়া মাস হলো ‘জমাদিউস সানি’, এটি হিজরি আরবি সনের ষষ্ঠ মাস। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে এই মাস দুটি ‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে সমধিক পরিচিত।


এর বাংলা অর্থ হলো প্রথম জমাদা ও দ্বিতীয় জমাদা বা প্রথম শীত ও দ্বিতীয় শীত; অর্থাৎ শীতকালের প্রথম মাস ও শীতকালের দ্বিতীয় মাস। (আল মুনজিদ)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তুমি পর্বতমালা দেখছ, মনে করছ উহা স্থির অচল, অথচ তারা মেঘপুঞ্জের ন্যায় সঞ্চারমান। ইহা আল্লাহরই সৃষ্টি নৈপুণ্য, যিনি সমস্ত কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত।’ (সুরা-২৭ নমল, আয়াত: ৮৮)।


শীত ও গ্রীষ্ম খোদা প্রদত্ত প্রকৃতির অবদান। এর প্রতিটিতে রয়েছে কুদরতের নিদর্শন ও নিগূঢ় রহস্য। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কুরাইশদের অনুরাগ রয়েছে! তাদের আগ্রহ আছে শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তাদের ইবাদত করা উচিত এই (কাবা) গৃহের রবের। যিনি তাহাদিগকে ক্ষুধায় অন্ন দান করেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেন।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ১-৪)।


‘জমাদা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ স্থির, অবিচল, দৃঢ়, কঠিন; জমাটবদ্ধ, নিস্তব্ধ, নীরব, নিথর, পাথর; শুষ্ক, খুষ্ক, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত: শীতল, শীতকাল, শীতবস্ত্র; কার্পণ্য, বদ্ধমুষ্টি; কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অস্থির সময়, চিন্তাযুক্ত অবস্থা। যেহেতু আরব দেশে শীতকালে প্রচণ্ড শীতে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তুষারে পরিণত হয় এবং তরল পানি জমে বরফে পরিণত হয়; জড় পদার্থ জমে কঠিন হয়ে যায়; উদ্ভিদ ও জীব নিথর হয়ে যায়; প্রাণীরা নীরব হয়ে যায়; তাই এই মাসকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে।


ইমাম আবু হানিফা (রা.) বলেন, ‘জমাদা’ হলো আরব দেশের শীতকাল, এটি বসন্তের নিকটবর্তী; গ্রীষ্মের পূর্বে। দুই ভূমির সীমানা বা দুই বাড়ির সীমানাকে এবং নিকট প্রতিবেশীকেও ‘জমাদা’ বলা হয়।


এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে নানা বিষয় বর্ণিত আছে। নেক আমল ও সৎকর্ম দ্বারা সাধারণ সময়ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আমরা জানি, নতুন বছরে নির্ধারিত দোয়া পড়া হয় এবং নতুন মাসে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া হয়। আসলে জীবনের প্রতিটি দিনই নতুন দিন, প্রতিটি সময়ই নতুন; তাই নেক আমলের মাধ্যমে সময়কে মূল্যবান করে তুলতে হবে


মূলত এই মাসের নামের মাঝে যেসব অর্থ বিদ্যমান তা তিন ভাগে বিভাজনযোগ্য। যথা: ইতিবাচক, নেতিবাচক ও মধ্যবর্তী বা ক্রান্তিকালীন। সুতরাং আমাদের করণীয় হবে ইতিবাচক অর্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশি বেশি নেক কাজ বা সৎকর্ম সম্পাদনে ব্রতী হওয়া। নেতিবাচক অর্থগুলো অনুধাবন করে নিজের মধ্যে থাকা সব নেতিবাচক অভ্যাস ও বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রতি মনোনিবেশ করা। ক্রান্তিকাল বা অন্তর্র্বতীকাল বিবেচনা করে সদা সতর্ক ও সজাগ থাকা এবং ইতিবাচক পরিবর্তন ও সাফল্য লাভের জন্য সদা সক্রিয় থাকা।


এ মাসের আমল হলো নফল নামাজ, নফল রোজা, দান–খয়রাত ইত্যাদি। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ, তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউয়াবিন নামাজ আদায় করা। কাজা রোজা থাকলে পুরা করা; মান্নত রোজা থাকলে তা আদায় করা। মাসের ১ তারিখ, ১০ তারিখ, ২৯ ও ৩০ তারিখ রোজা রাখা এবং চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’ বা শুভ্র সময়ের বাবা হজরত আদম (আ.)–এর সুন্নাত রোজা করা। সপ্তাহে প্রতি সোমবার, বৃহস্পতি ও শুক্রবার নফল রোজা পালন করা।


এ মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে নানা বিষয় বর্ণিত আছে। নেক আমল ও সৎকর্ম দ্বারা সাধারণ সময়ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আমরা জানি নতুন বছরে নির্ধারিত দোয়া পড়া হয় এবং নতুন মাসে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া হয়। আসলে জীবনের প্রতিটি দিনই নতুন দিন, প্রতিটি সময়ই নতুন; তাই নেক আমলের মাধ্যমে সময়কে মূল্যবান করে তুলতে হবে।


জিকির আজকার, দোয়া–কালাম, দরুদ ও সালাম, তাসবিহ তাহলিল, তাওবা ইস্তিগফার, খতম তিলাওয়াত, সদকা, খয়রাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মাস অতিবাহিত করলে নিশ্চিত এর বরকত, ফজিলত ও কল্যাণ লাভ হবে। অন্যথায় সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে হবে।


হাদিস শরিফে আছে, পরকালে নেককার মুমিন জান্নাতিদের কোনো আফসোস থাকবে না; তাঁদের আফসোস থাকবে শুধু ওই সময়ের জন্য, যে সময়গুলো তারা নেক আমল ছাড়া অতিবাহিত করেছেন বা বেহুদা কাটিয়েছেন। (তিরমিজি)।



Post Top Ad

Responsive Ads Here