ভোলা চরফ্যাশনে উচ্ছেদ হওয়া ২০ পরিবার খোলা আকাশের নিচে |
একে , এম গিয়াসউদ্দিন, ভোলা:
ভোলা চরফ্যাশনে আশ্রায়ন প্রকল্পের উচ্ছেদ হওয়া ২০পরিবার স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সেখানেও থাকতে না পেরে বাধ্য হয়ে উচ্ছেদের চার সপ্তাহের অধিক সময় পর খোলা আকাশের নিচে ঝুপড়ি ঘর তুলে তীব্র শীতের মধ্যে বসবাস করছেন।
চরফ্যাসন উপজেলায় নীলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে আশ্রিত ২০ পরিবারের ঘর ভেঙে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রশাসন পুনর্বাসন না করায় বিপাকে পরিবারগুলো।
এ বিষয়ে চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন রাসনা শারমিন মিথি বলেন, আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
তা ছাড়া জায়গাটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের এবং তাদের তদন্তাধীন। জায়গাটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। তবে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
জানা যায়, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড আদর্শ গ্রামে ২০১৭ সালে সরকারি অর্থায়নে নীলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২০টি ঘর বরাদ্দ দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। দীর্ঘ সাত বছর এ দুস্থ অসহায় ২০ পরিবার এসব ঘরে বসবাস করে আসছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই আশ্রিত ২০ পরিবারকে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হুমকি প্রদান করেন স্থানীয় যুবদলের কিছু নেতাকর্মী। তাদের হুমকিতে ঘর ছেড়ে না যাওয়ায় ১৭ নভেম্বর ও ১৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে ভাঙচুর করে লুটে নেওয়া হয় দরজা-জানালা এবং টিনের চাল।
এতে অসহায় পরিবারগুলোকে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। এসব পরিবার স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে বাধ্য হয়ে খালি ভিটায়ই ফিরেছে। বর্তমানে ঝুপড়ি ঘর তুলে সেখানেই করছে বসবাস।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পের উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছে মিজান-বকুল দম্পতি। কথা হলে মিজান বলেন, সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। দুর্বৃত্তরা আমাকে পুরো নিঃস্বকরে দিয়েছে। ২০১৭ সালে আশ্রয়ণের ঘরটি নিই।
১৭ নভেম্বর দুর্বৃত্তরা আমার ঘরের চাল-বেড়াসহ সবকিছু নিয়ে গেছে। ওইদিন রাত কোনোমতে কাটিয়ে সকালে আশ্রয়ের জন্য যাই বোনের বাড়ি।
সেখানে আশ্রয় মেলেনি। বাধ্য হয়ে খালি ভিটায়ই ফিরেছি। বর্তমানে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছি। প্রায় এক মাস হয়ে গেছে। কোনো কামকাজ নাই। কী করে ঘর তুলব মাথায় আসছে না। অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের পুনর্বাসনে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ দেখছি না।
আবাসনে ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী জেলে বাবুল বলেন, মেঘনার স্রোতে ভেঙে যায় আমাদের বসতভিটা। পরে অন্যের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছিলাম।
এরপর ২০১৭ সালে সরকারিভাবে নীলিমা আশ্রয়ণে ঘর পাওয়ার পর স্ত্রী- সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলাম। কিন্তু ১৭ নভেম্বর দুর্বৃত্তরা আমার আশ্রয়ণের ঘরের দরজা-জানালা, টিনের চালা ভেঙে দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। রাইতটা কোনোরকমে পার করি, দিন হইলে মালামাল নিয়া আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানেও আশ্রয় মেলেনি।
বাধ্য হয়ে আশ্রয়ণের খালি জায়গায় ফিরেছি এবং ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের রাস্তায় কেন নামানো হলো আমরা সেটাই বুঝতে পারছি না। আমাদের পুনর্বাসন করুন, আমাদের থাকার জায়গা দিন, এই শীতের মধ্যে আমরা কীভাবে রাত্রিযাপন করব। আমাদের এই জায়গা ছাড়া কোথাও থাকার মতো জায়গা নেই। তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে রাত্রিযাপন করছিলেন পিয়ারা বেগম।
তিনি বলেন, সেদিন রাতে ঘরের টিনের চাল ছুটাইয়া নেয় দুর্বৃত্তরা। কোনোমতে জীবন বাঁচিয়েছি। ঘরের সব আসবাব শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে রান্না করে খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছি, প্রায় ২৪ দিন অতিবাহিত হলেও সরকারিভাবে কোনো সাহায্য পাইনি। শুধু পিয়ারা নন, এমন চিত্র অন্য পরিবারগু লোরও। দুর্বৃত্তরা তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করায় নিরুপায় হয়ে পড়েছে।
একদিকে খাদ্যের অভাব, অন্যদিকে বাসস্থান তৈরির দুশ্চিন্তা ভর করেছে ঘরহীন-ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর।